401
Published on অক্টোবর 15, 2015তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই এবং আমরা চাই না, কেউ এ ধরনের অপরাধ করুক। বরং আমরা চাই প্রত্যেকেই একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করুক এবং আমরা দেশটিকে এই পথেই গড়ে তুলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া যখন দেশে ছিলেন তখন আগুনে পুড়িয়ে দেড় শতাধিক লোককে হত্যা করেছেন। তাদের এই নৃশংসতা থেকে বাসচালক, হেলপার, কলেজ ছাত্রী এবং শিশুদের কেউ রেহাই পায়নি। বিএনপি নেতা এখন বিদেশে বসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে এখানে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়েজিত এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ শামসুল হক এবং কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী বক্তব্য রাখেন।
২০০৩ সালে ও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াত জোটের নৃশংসতা এবং সংঘর্ষের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা হচ্ছে জন্তু, তারা মানুষ নয়। তারা সরকার বিরোধী আন্দেলনের নামে বহু লোককে পুড়িয়ে মেরেছে এবং দুই থেকে আড়াই হাজার বাস, প্রাইভেটকার ও অন্যান্য যানবাহন অগ্নিসংযোগ করেছে
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এই অশুভ শক্তিই দেশে এই ধরণের অপরাধ করে যাচ্ছে। কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
শেখ হাসিনা লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে এবং মাদকাসক্ত হওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আমরা তাদেরকে আর মাদকাসক্তির শিকার হওয়ার সুযোগ দেব না।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি রোল মডেল। কিন্তু কিছু লোক এটি পছন্দ করছে না। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যার সমাধানের উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান করেছে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর হত্যাকা-ের পর জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া কেউই এ বিষয়টি সমাধানের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি।’
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীদের বঞ্চনার অবসান ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অতীতের ছিটমহলগুলো এখন আর ছিটমহল নয় এবং এগুলো বাংলাদেশের অংশ। তিনি বলেন, ‘তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের পাশে যারা থাকবেন তাদেরকে তাদের আপনজন হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাবেক ছিটমহল বাসিন্দাদের কল্যাণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাবেক ছিটমহলবাসীদের কল্যাণে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, এখন আর আমাদের একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে অবহেলা করতে পারে না। তাঁর সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দারিদ্র্যসীমা ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের জন্য স্বাধীনতা এনেছে এবং এখন দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। দেশে যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমার একমাত্র প্রত্যাশা দেশের উন্নয়ন ও জনগণকে একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়া। আমার লক্ষ্য জনগণের সেবা করে যাওয়া। এ জন্য তিনি সকল মহলের সহযোগিতা ও দোয়া চান।
শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলায় তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির বর্ণনা দিয়ে বলেন, জেলাটি এখন মঙ্গামুক্ত হয়েছে। সরকারের পদক্ষেপের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রামে এখন মঙ্গা শব্দ বলে কিছু নেই। জেলায় এখন চাহিদার চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুড়িগ্রাম একসময় একটি অবহেলিত জেলা ছিলো। এখন আর সেটি নেই।
আওয়ামী লীগের গত সাত বছরে বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও খাদ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জেলায় বেকার সমস্যা সমাধানে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে ধরলা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করেছে। বর্তমান সরকার একই নদীর ওপর আরো একটি সেতু নির্মাণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জেলায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাঁর সরকার এ জেলায় রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে এবং সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেবে। তিনি এ জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটি কলেজ ও উচ্চবিদ্যালয়কে জাতীয়করণের এবং একটি করে স্টেডিয়াম তৈরির আশ্বাস দেন।
এর আগে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় একটি সমন্বিত বীজ হিমাগার, কুড়িগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কুড়িগ্রাম সদর ডাকবাংলো, কুড়িগ্রাম মৎস্য অফিরে অফিস ভবন-কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের দোতলা শিক্ষা ভবন, চিলমারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, রাজিবপুর উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০-শয্যার হাসপাতাল ভবন, রাজিবপুর মহিলা কলেজের শিক্ষাভবন, রাজিবপুর থানা ভবন, রৌমারী ডাটাবেজ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষাভবন, নাগেশ্বরী উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০-শয্যার হাসপাতাল ভবন এবং ভুরুঙ্গামারী ডাকবাংলো।
প্রধানমন্ত্রী যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম নার্সিং হোস্টেলের নতুন ভবন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ১০০ সিলেটর মহিলা হোস্টেল ও বিজ্ঞান ভবন, কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম, মজিদ আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষাভবন, খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ, কাঠালবাড়ী ডিগ্রি কলেজ, কৃষ্ণমহল স্কুল এন্ড কলেজ এবং নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ, রাজিপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল স্টেশন, কাটিমারি ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল স্টেশন ও উলিপুর নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র।