355
Published on অক্টোবর 15, 2015তিনি বলেন, ‘আলোর পথের যাত্রা আপনাদের শুরু হয়েছে। এ যাত্রা অব্যাহত থাক, আপনাদের উন্নয়নে যা যা করণীয় তার সবই আওয়ামী লীগ সরকার করবে।’
তিনি ফুলবাড়ি উপজেলার দাসিয়ারছড়াকে একগুচ্ছ ফুল হিসাবে অভিহিত করে বলেন, ‘আপনারা ফুলকুঁড়ি বা একগুচ্ছ নবপ্রস্ফুটিত ফুলের মত। দীর্ঘ ৬৮ বছর প্রতীক্ষার পর আপনারা একটি দেশ পেয়েছেন। আপনারা দেশের নাগরিক, সেভাবেই নিজেদেরকে বিবেচনা করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ কুড়িগ্রাম জেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া সফরে এসে স্থানীয় এক সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন। প্রায় আড়াই মাস আগে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় এটাই বাংলাদেশ সরকার প্রধানের প্রথম সফর।
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১১ টায় স্থানীয় জনতার বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলবাড়ি উপজেলা থেকে সড়ক পথে দাসিয়ারছড়া সুধী সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেন। আর ঠিক ১১টা ৪ মিনিটে বৈদ্যুতিক সংযোগ সুইচে চাপ দিয়ে বিলুপ্ত এই ছিটমহলের প্রায় ৭শ’ পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেন। তিনি স্থানীয় ৫টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য সোলার প্যানেলও বিতরণ করেন।
দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বালিকা বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর আগেও আপনাদের মাঝে আসার ইচ্ছে ছিল, বিন্তু আসতে পারিনি কেন সেটা আপনারা ভালোই জানেন।’
তিনি বলেন, আপনারা বাংলাদেশের সন্তান, বাংলাদেশের নাগরিক, বাংলাদেশের আপনজন এবং আজকে আপনাদের মাঝে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
ছিটমহলবাসীরা ৬৮ বছর ‘মানবেতর জীবন যাপন’ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা এসময় ইতিহাস টেনে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সময় মুজিব-ইন্দিরা মৈত্রী চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়। ১৯৭৪ সালেই স্থল সীমান্ত চুক্তি সংসদে পাস করেন বঙ্গবন্ধু।
অবশ্য বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশে যারা সরকার গঠন করেছিল তারা এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোনও কাজ করেনি , মন্তব্য করে পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় এবং কারাগারে জাতীয় নেতা হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেন, ‘জিয়া ক্ষমতায় আসে, জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে, কিন্তু কেউ এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বা করবার মত তারা মনে হয় সাহসও পায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আলোচনা শুরু করলেও পাঁচ বছরের মধ্যে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসে আবার চুক্তি বাস্তায়নের কাজ শুরু এবং তা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেই। এসময় তিনি স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস করায় ভারতের পার্লামেন্টের সদস্যদের এবং মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতীয় রাজ্যের সরকারগুলোকেও ধন্যবাদ জানান ।
সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহি, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন, ফুলবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার প্রমুখ।
শেখ হাসিনা দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকে আপনারা মূল ভূখন্ডের বাসিন্দা। আপনারা ভুলেও কখনো আর নিজেদেরকে ছিটমহলবাসী বলে চিন্তা করবেন না। আপনারা এই দেশের নাগরিক। সেইভাবেই নিজেদেরকে বিবেচনা করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে যে ছিটমহলগুলো পেয়েছে সেখানে ইতোমধ্যেই পাঁচটি অস্থায়ী পুলিশ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মসজিদ-মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান এবং রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। সড়ক নির্মাণের অগ্রগতি স্বচক্ষে দেখার উদ্দেশেই তিনি ফুলবাড়ি থেকে দাসিয়াছড়া পর্যন্ত ১৯ কি.মি সড়ক পথে এসেছেন বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিনের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কর্মসংস্থানের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ভূমিহীন ও অতিদরিদ্রদের ঘড়বাড়িও নির্মাণ করে দেয়া হবে। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে সহায়তার জন্য ঋণদান কর্মসূচিও নেয়া হয়েছে।
এসময় সারা দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছি। ইনশাল্লাহ সেদিন বেশি দুরে নয় যেদিন আমরা দেশের প্রতিটি ঘরে বৈদ্যুতিক আলো জ্বালাতে পারবো। আমরা শুধু বিদ্যুতের আলো নয়, শিক্ষার আলো ও স্বাস্থ্যসেবা দেবো।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে বলেও তার সরকারের লক্ষ্যের কথা তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন ।
সব্যসাচী লেখক, কুড়িগ্রামের সন্তান সৈয়দ শামসুল হককে সঙ্গে করেই প্রধানমন্ত্রী সুধী সমাবেশে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।