384
Published on অক্টোবর 12, 2015প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কেবিনেট সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেছেন, সংশোধনী অনুযায়ী কেবল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে সুনির্দিষ্ট দলের প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
তিনি জানান, সরকার তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন এবং দেশে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেবিনেট সচিব বলেন, বৃটেন ও ভারতসহ বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংসদীয় ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই দুটি দেশের উদাহরণ দেয়া যায় কারণ, বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবস্থা এসব দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর অনুরূপ।
মেশাররাফ হোসাইন বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে সকল প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধনী) আইন জারি করা হবে,কারণ পৌরসভা নির্বাচন আসন্ন এবং এখন সংসদ অধিবেশন চলছে না।
তিনি বলেন, অন্য চারটি সংশোধনী অনুমোদনের জন্য সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে এবং পরবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।
কেবিনেট সচিব বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য ভাইস-চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত আসনে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদ যুক্ত করার জন্য জেলাপরিষদ আইনে আরেকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে জেলা পরিষদ নির্বাচেনে ভোটার হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
কেবিনেট সচিব বলেন, নতুন সংশোধনীতে যে কোন আবেদনের ভিত্তিতে এমনকি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনের ব্যাপারে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলেও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের পদে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার সকল সুযোগ রহিত করা হয়েছে।
কেবিনেট সচিব বলেন, সরকার নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করবে এবং কোন জটিলতা দেখা দিলে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। তিনি আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন আইনে এ বিধি যুক্ত করা হয়েছে এবং এখন থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল পর্যায়ে তা প্রযোজ্য হবে।
কেবিনেট সচিব মোশাররাফ হোসাইন বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে আরো দুটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আইন, ২০১৫ এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৫।
এছাড়াও মন্ত্রিসভা বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অব্যবহৃত ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি নীতি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে যোগদান করার জন্য সিনিয়র স্টাফ নার্সদের বয়সসীমা শিথিল করার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। আইটি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার মূল লক্ষ্য নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়া হবে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি সিরাজগঞ্জ জেলায় শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের অনুশীলন ও তাঁর ওপর গবেষণা ছাড়াও সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, চারুকলা, সমাজ বিজ্ঞান, কৃষি, সমবায়, প্রাণিবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষা দেয়া হবে।
কেবিনেট সচিব জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো হবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই। রবীন্দ্রনাথের ওপর শিক্ষাদান ও গবেষণায় নিয়োজিত চারজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে অন্তর্ভুক্ত করার একটি নতুন সুপারিশ করা হয়েছে।
কেবিনেট সচিব বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূ-সম্পত্তি সংক্রান্ত নীতি পূর্ববর্তী সকল আইন সম্পৃক্ত করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতি অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ ম্যানুয়েল ও ডিজিটাল উভয় পদ্ধতিতে তাদের সকল ভূ-সম্পত্তির হিসাব সংরক্ষণ করবে। এসব ভূ-সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে হবে, তবে অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহারের জন্য যে কোন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে অস্থায়ী মেয়াদের জন্য ইজারা দেয়া যেতে পারে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান পেট্রল/ডিজেল পাম্পগুলো এবং সিএনজি ষ্টেশনগুলো বিভাগের ভূমির ওপর থাকবে, তবে এখন থেকে এই কাজের জন্য আর কোন ভূমি ইজারা দেয়া হবে না। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে সড়ক দ্বীপের ওপর ভাস্কর্য, দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যমূলক কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যাবে। অব্যবহৃত ভূমি মৎস্য চাষ, কৃষি, সামাজিক বনায়ন ছাড়াও যাত্রীদের জন্য বিশ্রামকক্ষ, যাত্রীছাউনি, ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, বিলবোর্ড ডিজিটাল ব্যানার ও স্ক্রল ভিশন স্থাপন কাজের জন্য ইজারা দেয়া যাবে।
কেবিনেট ডিভিশন এর আগে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রিপোর্ট মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে। এ সময়ে মন্ত্রিসভার ১১টি বৈঠকে ৭৮টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪৫টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ৩৩টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। একই সময়ে তিনটি নীতি/কৌশল গৃহীত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে চারটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত এবং সংসদে আটটি আইন পাস করা হয়েছে।