396
Published on অক্টোবর 10, 2015শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যখন দেশে ছিলেন, তখন তথাকথিত আন্দোলনের নামে নিরীহ বহু লোককে হত্যা করেছেন। তিনি এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং বিদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তাদের হত্যা করছেন। তিনি এ ক্ষেত্রে হীন কৌশল নিয়েছেন এবং এই কৌশল ব্যবহার করছেন।
শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রীর এ ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে জনগণের প্রতি আহবান জানান এবং খালেদা জিয়ার চক্রান্ত নস্যাৎ করতে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুর বার এসোসিয়েশনের নির্বাচিত কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে রংপুর জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট আবদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মালেক, বরিশাল জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট আনিসউদ্দিন শহীদ এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদ্য নির্বাচিত সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, চট্টগ্রাম জেলা এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট মুজিবুল হক চৌধুরী, গোপালগঞ্জ জেলা বার এসোসিয়েশনের এডভোকেট নাসিরউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আসগর আলী, গাজীপুর জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা জেলা বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নজিবউল্লাহ হিরু অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলছে এবং বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছেছে বিএনপি-জামায়াত তখন দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে তারা মানুষ মরছে এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে।
গত ২০১৩ সালে এবং চলতি বছরের শুরুতে ৯২ দিন বিএনপি-জামায়াতে নৃশংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময় হত্যা ও নির্যাতন থেকে নারী ও শিশু কেউই রক্ষা পায়নি। দেশবাসী এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি অতীতে কখনোই দেখেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না, খালেদা জিয়া এই ঘোষণা দিয়ে এ বছরের আন্দোলন শুরু করেন। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই বিএনপি নেতা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন এবং বাস ও সিএনজিতে অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংস করেন। একইভাবে ২০১৩ সালে জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে আন্দোলনের নামে হত্যা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছরের শাসনকালের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীসহ জনগণে বিরুদ্ধে তাদের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তারা দেশব্যাপী সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
বিচার বিভাগের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আইন কমিশন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং দ্রুত বিচার আদালতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ দীর্ঘকাল উপেক্ষিত ছিল। তবে ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিভাগের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। ‘উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের সরকার প্রতিটি জেলায় নতুন আদালত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করে।’
আদালত কার্যক্রম ডিজিটালকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর সরকার হাইকোর্ট ও দেশের অন্যান্য আদালতের মধ্যে ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
তিনি আদালতের লাইব্রেরীগুলোতে পর্যায়ক্রমে ই-লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় বই সরবরাহের আশ্বাস দেন। ‘দেশের মানুষ তাদের অধিকার হিসেবে ন্যায় বিচার চায় এবং তাঁর সরকার এটা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, তিনি চান না দেশের মানুষ তাঁর মতো ন্যায়বিচার বঞ্চিত হোক এবং এটা দুঃখজনক যে, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করে অর্ডিন্যান্স ঘোষণা করে তার পিতা-মাতা ও ভাইদের হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া রুদ্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরাচাররা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের মতোই তাদের বৈদেশিক মিশনে নিয়োগ দেয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অন্যান্য খাতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বলেন, দরিদ্রদের জীবনযাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রদের ব্যবধান কমিয়ে আনা একটি বিরাট অর্জন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে এসেছে এবং সকল খাতের সাফল্য অর্জনের সুবাদে বিশ্বে এখন রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৪,০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে এবং সম্প্রতি ১০০তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে এবং দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।