376
Published on অক্টোবর 5, 2015জাতিসংঘ পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ ও তথ্য প্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কার অর্জন করায় তাঁকে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি সোমবার এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমিরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তৃতা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।
শিশুদের জন্য বাসযোগ্য আবাসভূমি গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, এটাই আজকের দিনে আমার প্রতিজ্ঞা’।
‘লাখো শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেবো না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ও জাতিকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদের এ বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা হবে। দেশের সবাই যেন উন্নত জীবন পায় সে লক্ষ্যে তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে যা যা দরকার তাই করা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতেই তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে ভালবেসেছিলেন। দেশের মানুষকে ভালোবেসেই তাদের মুখে হাসি ফোঁটাতে এবং সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কুচক্রী মহল তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পিতার কাছ থেকে শেখা ভালোবাসা দিয়েই তিনি বাংলার মানুষকে ভালোবেসে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে চলেছেন।
জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ নিয়ে অনেক চক্রান্ত হয়েছে। সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলছে।
তিনি বলেন, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষের জন্য সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তাঁর সরকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের জীবন রক্ষা করতেও তাঁর সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, নিজেদের সীমিত সম্পদ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করছে তাঁর সরকার। তিনি বলেন,কারো সহায্যের আশায় বাংলাদেশ আর বসে থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তন মেকাবেলায় আন্তজার্তিক সব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলব এটাই লক্ষ্য। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের জন্য গবেষণার মাধ্যমে লবণাক্ত পানিতে ধান উৎপাদনেও তাঁর সরকার উদ্যোগ নেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যাতে পুষ্টি পায় সে লক্ষ্যে তাঁর সরকার মাছ, মুরগীসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। জলাধার স্বাভাবিক রাখতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে যা যা করা দরকার তাঁর সরকার সবই করবে।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল-মাল আব্দুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৪টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হলে ঢাকার দুই মেয়র তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে...’ গানটি মাইকে বাজতে থাকে।
উৎসবকে বর্ণিল করতে ওয়ার্দা রিহাবের কোরিওগ্রাফিতে ‘আর্থ প্যারেড’ শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রায় ১ হাজার শিল্পী অংশগ্রহণ করে।
দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলার জনগণের সংগ্রাম, শেখ হাসিনার সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ ও প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রহণ করার ওপর নির্মিত একটি প্রামান্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। শ্রেষ্ঠা ও গ্রহণ নামের দুই শিশু শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ‘সম্মাননাপত্র’ পাঠ করে শোনান। পরে এই সম্মাননাপত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় দুই মেয়র ‘প্রকৃতি বৃক্ষ’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।