330
Published on সেপ্টেম্বর 25, 2015তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে, বাংলাদেশে ব্যবসা করা আপনাদের জন্য একটি অধিকতর পছন্দের বিষয় হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে হোটেল ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়ায় আয়োজিত ইউএস বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যানডিং (বিসিআইইউ) এর সঙ্গে একটি গোলটেবিল আলোচনায় বক্তৃতা করছিলেন।
বিসিআইইউ’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও পিটার জে. টিচানস্কি, স্কাইপাওয়ার গ্লোবালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও কেরী এডলার, আমেরিকান পাওয়ার কর্পোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় আগরওয়াল, জেফাইর ম্যানেজমেন্টের সিইও টমাস ব্যারী, মাস্টারকার্ড ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড ব্রান্ডট, এবং এক্সিলারেট এনার্জির চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার ড্যানিয়েল বাসটোস সহ যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ টি বৃহৎ কোম্পানীর প্রধান ও সিইওগণ গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও ড. গওহর রিজভি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন, এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমদ অন্যান্যের মধ্যে গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান চতুর্থ অর্থনীতি। বাংলাদেশ বিগত ছয় বছর ধরে ৬.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার ধরে রেখেছে এবং এখন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার অর্জনকারী ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাথাপিছু জিডিপি ১,৩১৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থ বছরে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। বৈশ্বিক রপ্তানী ৩১.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, গত মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র প্রায় ১০ শতাংশ মাত্র। দেশের বার্ষিক সরকারী ব্যয়ের ৯০ শতাংশের বেশী এখন অভ্যন্তরীন সম্পদ থেকে মেটানো যাচ্ছে। এসএমই খাতের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামীন অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে দ্রুত গতি লাভ করেছে। কৃষি খাতে দেশ এখন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, প্রক্রিয়াকরণ, বহমুখী ও মূল্য সংযোজন প্রবন হয়ে ওঠেছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও খাদ্য শস্য, হাঁস-মুরগী, গবাদিপশু ও মাছ উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এখন উল্লেখযোগ্য।
কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সকল শ্রমিকের মর্যাদা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে চাই।
এ প্রসঙ্গে তিনি তৈরী পোষাক শ্রমিকদের অধিকার সমুন্নত রাখা, তাদের পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং যথাসময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ করার লক্ষ্যে সরকার ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোষাক খাত ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক রপ্তানী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প খাতের সম্ভাবনার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্থানীয় উৎপাদন এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ওষুধের ৯৭ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ এখন বিশ্বের ৮৩ টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। সাফল্যজনকভাবে এ খাতে এখন বায়ো-টেক পণ্য এবং ওষুধ তৈরীর উপাদানও উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দ্রুততার সঙ্গে এখন উচ্চ মান বজায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে জেনেরিক ওষুধ তৈরীর একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হয়ে ওঠছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাহাজ নির্মান এখন বাংলাদেশে একটি সর্বশেষ সংযোজন। হালকা থেকে মাঝারি আকারের জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতারা বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে আইসিটি সংক্রান্ত জ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। বাংলাদেশে তৈরী হাজার হাজার অ্যাপ্লিকেশন এখন আইফোন, স্যামসাং গ্যালাক্সি, অন্যান্য এ্যানড্রয়েড ও ব্ল্যাকবেরী ফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, তরুণ বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। প্রতি বছর এ খাতে প্রায় ২০ হাজার আইটি গ্রাজুয়েট যোগ দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ টেলিকম খাত, আইসিটি ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাতের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী নীতি এবং নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, গত ছয় বছরে ইন্টারনেট ব্যান্ডউডথ ব্যয় ছয়বার হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, ইন্টারনেট সংযোগ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন মধ্যস্বত্ত্বভোগী ছাড়াই জনগণের দোরগোড়ায় প্রায় ২০০ জনসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটি ভিত্তিক শিল্প পার্কের পাঁচটি ব্লক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে যা ২০১৮ সালের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য নগরীগুলোতে আরো কয়েকটি আইটি পার্ক করার কাজ চলছে। পাশ্চাত্যে আমাদের অনেক বন্ধু ধারণা করছেন যে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে মুনাফা লাভের হার তাদের নিজ দেশের তুলনায় বেশীই হবে।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে ও উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্প্রসারণের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উভয় দেশ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমতা, বহুমত ও সেক্যুলারিজমের বিষয়ে অভিন্ন মূল্যবোধ পোষণ করে।
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন ও সেবার ক্ষেত্রে ভিন্ন পর্যায়ে থাকলেও, আমরা বৈচিত্র্য, সহিষ্ণুতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সমর্থন করি। আমরা অধিকার ভিত্তিক সমাজে বিশ্বাস করি। স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা সন্ত্রাস দূরীকরণ এবং সমাজে সহিংস চরম পন্থা মোকাবেলায় অভিন্ন অবস্থানে রয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক দাবি করে যে, ‘অভিন্ন স্বার্থ’ এবং ‘পারস্পরিক কল্যাণে’ উভয় দেশ আরো বেশী সহযোগিতা করে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ১৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন (এসইজেড) চালু রয়েছে। জাপান ও ভারত দুটি করে জোন চালু করতে যাচ্ছে। এছাড়া চীন একটি জোন চালু করবে।
তিনি বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে আরো ৩ টি এসইজেড চালু করার জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং আগামী পাঁচ বছরে আমরা সারা বাংলাদেশে এই ধরণের ১০০ টি এসইজেড স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এসইজেডগুলো আসিয়ানের মতো প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ-সুবিধা দিবে। তিনি বলেন, যে কেউ এসইজেড ‘উন্নয়নকারী’ এবং ‘পরিচালনাকারী’ অথবা কেবল এসব এসইজেড এলাকায় ‘বিনিয়োগকারী’ হিসেবে আসতে পারেন।
মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিরোধ নিস্পত্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য এখানে সম্পৃক্ত হওয়ার পথ সুগম করেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুল এখন ব্লু ওশান সম্পদ আহরণের জন্য উন্মুক্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাত ব্যাপক স্থিতিস্থপকতা প্রদর্শন করেছে। তারা ক্রমেই বৈশ্বিক হয়ে ওঠছে। তারা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সূচক ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ‘ব্যবসা করার’ দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।