453
Published on সেপ্টেম্বর 11, 2015তিনি বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে তা আপনারা অক্ষুন্ন রাখবেন।’
শেখ হাসিনা আন্তরিকতা ও মানবিক দৃষ্টি থেকে জনগণের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জনে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন,আপনাদের মনে রাখতে হবে, মানুষ তার চরম বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য যায়। আইনী সেবা দিয়ে ও মানবিক আচরণ করে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের ভাষণে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জিপে করে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। তিনি শিক্ষানবিস সেরা এএসপিদের মাঝে মেডেল বিতরণ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক, একাডেমির অধ্যক্ষ নাঈম আহমেদ এবং উপাধ্যক্ষ অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নতুন পুলিশ অফিসারদেরকে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নিশ্চিত করবেন।’
পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি যুগোপযোগী আধুনিক পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা এবং এজন্য আমরা বিভিন্ন বাস্তবমুখী ও জনবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৭৩৩টি ক্যাডার পদসহ ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তথাপিও দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশে জনবল যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, এই বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশ পুলিশে আরও ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যেই ১০ হাজার পুলিশ সদস্যের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জনবলের নিয়োগ কার্যক্রম অচিরেই সম্পন্ন করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্ধিত জনবলের সাথে প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহের বিষয়টিও আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘হোম অব পুলিশ’ খ্যাত এই একাডেমিকে আমরা ঢেলে সাজিয়েছি। নবনিযুক্ত পুলিশ সুপারদের ধাপে ধাপে মৌলিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মাস্টার অব পুলিশ সায়েন্স’ ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পুলিশের পৃথক বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। ‘এ লক্ষ্যে আমরা পুলিশ বাহিনীকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
সকল অপতৎপরতা মোকাবেলায় পুলিশ হচ্ছে জনগণের বর্ম- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা বরাবরই তাদের জঙ্গী ও নাশকতামূলক কাজে পুলিশকে টার্গেট করেছে।
তিনি বলেন, এর কারণ একটাই- পুলিশকে দুর্বল করতে পারলে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল হবে। বার বার আঘাত আসা সত্ত্বেও পুলিশ সাহসের সাথে এই নাশকতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহিংসতা মোকাবেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। যার মধ্যে ১৭ জন পুলিশ সদস্য।
সংবিধান, গণতন্ত্র, আইনের শাসন রক্ষার জন্য এ আত্মত্যাগ এক বিরল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের এই অবদান গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী, জাতীয় চার নেতার খুনী ও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের মাধ্যমে এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে সোপান আমরা রচনা করেছি তাতে পুলিশ বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সফলতার এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পর পর দুই মেয়াদে আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের অসমান্য সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে তাঁর সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের সুবাদে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী নবীন কর্মকর্তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও শৃংখলার প্রতি যে আনুগত্য বোধ আপনারা অর্জন করেছেন, তা জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজে লাগাবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্বাধীনতার সুফল দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়া। শান্তি-শৃংখলা রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তা বিধানই হচ্ছে উন্নয়নের প্রথম সোপান। আর এ গুরুদায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ ধরনের সাফল্য অর্জন করতে হলে আমাদের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন ঘটাতে হবে এবং এই গুরুদায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর ওপরই অর্পিত।
২৬ জন নারী সদস্যসহ মোট ১৬১ জন এএসপি এই প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী কোর্সে অংশগ্রহণকারী সেরা পুলিশ অফিসারদের মাঝে মেডেল বিতরণ করেন। প্যারেড কমান্ডার হিসেবে এএসপি হাসিনুজ্জামান কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে পংকজ বড়ুয়া ‘সেরা শিক্ষানবিস’ এ্যাওয়ার্ড এবং রেজওয়ানা চৌধুরী ‘ বেস্ট একাডেমিক ’ এওয়ার্ড এবং ফারুক আহমেদ ‘বেস্ট রাইডার’ এ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্যারেড গ্রাউন্ডে গ্যালারি এবং পুলিশ একাডেমিতে তরুনিমা ও উর্মি নামে দুটি গেস্ট হাউস উদ্বোধন করেন।