সরকারী চাকুরিজীবী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য নতুন পে স্কেলের অনুমোদন দিল মন্ত্রীসভা

1467

Published on সেপ্টেম্বর 7, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন বেতন স্কেলে ২০টি গ্রেড রয়েছে। সর্বোচ্চ গ্রেডের (গ্রেড-১) বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন গ্রেডের (বিশতম গ্রেড) প্রাথমিক মূল বেতন হবে ৮,২৫০ টাকা।

বর্তমান বেতন স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা (ফিক্সড) এবং সর্বনিম্ন গ্রেডের মূল বোতন ৪,২৫০ টাকা।

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা সরকারি কর্মচারীদের বর্তমান শ্রেণীবিভাগ বাদ দিতে পে-কমিশনের সুপারিশ অনুমোদন করেছে। নতুন বেতন স্কেলের অধীনে সকল বেসামরিক কর্মচারীর অবস্থান তাদের গ্রেড অনুযায়ী হবে। এতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যকার শ্রেণীবিভাগের মানবিক প্রভাবেরও অবসান ঘটবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের মতো শীর্ষ বেসামরিক আমলাদের বেতন হবে ৮৬ হাজার টাকা (ফিক্সড)। সিনিয়র সচিবদের বেতন হবে ৮২ হাজার টাকা।

অন্যান্য গ্রেডের মূল বেতন হবে গ্রেড-২-এ ৬৬ হাজার টাকা, গ্রেড-৩-এ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড-৪-এ ৫০ হাজার টাকা, গ্রেড-৫-এ ৪৩ হাজার টাকা, গ্রেড-৬-এ ৩৫ হাজার ৫শ’ টাকা, গ্রেড-৭-এ ২৯ হাজার টাকা, গ্রেড-৮-এ ২৩ হাজার টাকা, গ্রেড-৯-এ ২২ হাজার টাকা, গ্রেড-১০-এ ১৬ হাজার টাকা, গ্রেড-১১-এ ১২ হাজার ৫ শ’ টাকা, গ্রেড-১২-এ ১১ হাজার ৩শ’ টাকা, গ্রেড-১৩-এ ১১ হাজার টাকা, গ্রেড-১৪-এ ১০ হাজার ২শ’ টাকা, গ্রেড-১৫-এ ৯ হাজার ৭শ’ টাকা, গ্রেড-১৬-এ ৯ হাজার ৩শ’ টাকা, গ্রেড-১৭-এ ৯ হাজার টাকা, গ্রেড-১৮-এ ৮ হাজার ৮শ’ টাকা, গ্রেড-১৯-এ ৮ হাজার ৫শ’ টাকা এবং গ্রেড-২০-এ ৮ হাজার ২৫০’ টাকা।

নতুন বেতন স্কেলে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট কারো জন্য ফিক্সড করে দেয়া হয়নি। দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্য বেতনের একটি নির্দিষ্টট হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-৬ পর্যন্ত চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাবেন।

এর মধ্যে গ্রেড-৫-এর কর্মচারীরা পাবেন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। গ্রেড-৩ এবং গ্রেড-৪-এর কর্মচারীরা পাবেন ৪ শতাংশ করে। গ্রেড-২-এর কর্মকর্তারা পাবেন ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন বেতন স্কেলে তারা ফিক্সড বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের চেয়ে আরো বেশি বেতন পাবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পে-কমিশন, সচিব কমিটি এবং অর্থ বিভাগের কাছে বিষয়টি সরকারি কর্মচারীদের জন্য বৈষম্যমূলক বিবেচিত হওয়ায় মন্ত্রিসভা ‘টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড’ বাতিল করেছে।

নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে সরকারি কর্মচারীরা বিদ্যমান দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি নববর্ষ ভাতা পাবেন। এই ভাতার পরিমাণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতনের ২০ শতাংশ হবে।

বিদ্যমান বিধান অনুসারে শতকরা হাওে বাসা ভাড়া দেয়া হলেও অপরাপর ভাতাসমূহ নির্ধারিত থাকবে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা যে পরিমাণ ভাতা পান তারা নতুন স্কেলে তার চেয়ে কম পাবেন না।

নতুন বেতন স্কেল অনুসারে সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

নতুন পে-স্কেল অনুসারে অবসরগ্রহণের পর সরকারি কর্মচারীরা তাদের বেতনের ৯০ শতাংশ অবসর ভাতা হিসেবে পাবেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্যও এই পে-স্কেল প্রযোজ্য হবে।

বেতন কমিশনের সুপারিশ এবং সচিব কমিটির ও অর্থ বিভাগের মতামত অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেয়ার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে উল্লেখ করে মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, অর্থ বিভাগ পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। মেজর জেনারেল সমমানের পদমর্যাদাসম্পন্ন সামরিক কর্মকর্মারা গ্রেড-১-এ বেতন পাবেন।

জেনারেল ও সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তারা ৮৬ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল বা সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তারা ৮২ হাজার টাকা (নির্ধারিত) বেতন পাবেন।

মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিন বাহিনীর প্রধানগণ সমান বেতন ৮৬ হাজার টাকা (নির্ধারিত) পাবেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের পদমর্যাদা উন্নীত করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি ও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। ওইসব দাবি-দাওয়া সম্পর্কে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয় বিধায়, মন্ত্রিসভা বেতন বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ওই প্রস্তাবগুলো মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ছাড়াও বিদ্যমান আইনে কিছু পরিবর্তন এনে মন্ত্রিসভা নীতিগতভাব ‘বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এ্যান্ড সার্জনস এ্যাক্ট-২০১৫’ অনুমোদন করেছে।

সংশোধনী অনুসারে একজন চিকিৎসক বা সার্জন ২০ বছরের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন এমন যোগ্যতার ভিত্তিত্তে কাউন্সিলের ফেলো হওয়ার জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।

নতুন আইনে অপরাপর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠিত হবে।

শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান ও অর্থ বিভাগের মোহাম্মদ আলী খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত