403
Published on সেপ্টেম্বর 6, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২টি সাবমেরিন যুক্ত করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সাবমেরিন ২টি নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হবে ইনশা’আল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, সাবমেরিনের জন্য ঘাঁটি ও অন্যান্য অবমাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। একই সঙ্গে খুলনা নদী অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ নৌবহর কার্যক্রম চালুর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে মংলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দীগরাজ নৌ-ঘাঁটিতে একটি ‘অয়েল ফ্লিট ট্যাঙ্কার’ কমিশনিং এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ইউটিলিটি (এলসিইউ) ও ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্কার সংযুক্তকরণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
এতে দেশে নির্মিত প্রথম অয়েল ফ্লিট ট্যাঙ্কার খানজাহান আলী এবং এলসিইউ জাহাজ সদ্বীপ ও হাতিয়া... এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্কার- এলসিটি-১০৩ ও এলসিটি-১০৫ যথাক্রমে নৌবাহিনীতে কমিশনিং ও সংযুক্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী মংলা নৌ-ঘাঁটিতে পৌঁছলে বিমানবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব এবং খুলনা নৌ-অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার তাঁকে স্বাগত জানান।
নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড-অব-অনার জানায়। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এ সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঐতিহ্য অনুসারে ’শীপ বেল’ বেজে উঠে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।
শেখ হাসিনা চেইন অব কমান্ড ও পেশাগত দক্ষতা বজায় রাখার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা-নাবিকদের প্রতি আহ্বান্ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কর্মকর্তা ও নাবিকগণ পেশাগত দক্ষতা মাধ্যমে উন্নততর কর্মদক্ষতা, শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা সব সময় সমুন্নত রাখবেন।
তিনি বলেন, এটা সবার প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশের পাশাপাশি বিশ্বের যেকোন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা বলেন, এই মহান নেতা স্বাধীনতার পরপরই দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষায় শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে দেশের সমুদ্রসীমা ও এর সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আগেই এই সত্য অনুধাবন করে তাঁর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলনে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠার দাবি করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ছোট্ট এই নৌবাহিনী বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনার বাস্তবায়নে মাত্র ২টি পেট্রোল ক্রাফ্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ মর্যাদাপূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হতে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ শাক্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন অবদানের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা বেগবান হয়।
তিনি বলেন, সে সময় অত্যাধুনিক মিসাইল ফ্রিগেট বানৌজা বঙ্গবন্ধু, লার্জ-পেট্রোল ক্রাফ্ট মধুমতি, পেট্রোল ক্রাফ্ট বরকত, তিতাস, কুশিয়ারা এবং ট্যাঙ্কার ইমাম গাজ্জালী নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়। এছাড়া রুগ্ন খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর ছিল আমাদের সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বর্তমান মেয়াদে সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ‘যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ’।
তিনি বলেন, এই পরিকল্পনার আওতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে সহায়তার জন্য অত্যাধুনিক সার্ভে জাহাজ বানৌজা অনুসন্ধান নৌবহরে সংযোজন করা হয়। এরপর মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট সংযোজন নৌবাহিনীতে নতুন মাত্রা যোগ করে।
এরপর একে একে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে দু’টি মিসাইল ফ্রিগেট, একটি আমেরিকায় তৈরি ফ্রিগেট, দু’টি মিসাইল করভেট এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফ্ট।
শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় তৈরি আরও একটি ফ্রিগেট বানৌজা সমুদ্র অভিযান ও এবং গণচীনে নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক দু’টি করভেট বানৌজা প্রত্যয় এবং স্বাধীনতা এ বছরেই নৌবহরে সংযোজিত হবে।
তিনি বলেন, এ সরকারের আমলেই আনকনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার’র জন্য নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে স্পেশাল ফোর্স ‘সোয়াডস’।
তিনি বলেন, এছাড়াও বিশেষ বিবেচনায় উপকূলীয় অঞ্চল সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে নজরদারি স্টেশন এবং প্রাসঙ্গিক অবকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালান রোধ এবং সমুদ্র পথ উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষায় আমাদের সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সুসজ্জিতভাবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রথমবারের মত দেশীয় ও বিদেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিপইয়ার্ডে তৈরি নৌবাহিনীর দ্রুতগামী ট্যাঙ্কার চালুর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই অব্যাহত অগ্রগতি আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
তিনি বলেন, দেশের শিপবিল্ডিং শিল্পের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক।
তিনি বলেন, দেশীয় শিপইয়ার্ডের অগ্রগতি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি শিপবিল্ডিং জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ‘অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই দেশে আরো উন্নত যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।’
পরে প্রধানমন্ত্রী খানজাহান আলী জাহাজে আরোহণ করেন এবং বিভিন্ন সেকশন ঘুরে দেখেন।
মন্ত্রীবৃন্দ, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদঃ বাসস