397
Published on আগস্ট 31, 2015তিনি আগাছা নির্মূল করে সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সমুন্নত রাখার জন্যও ছাত্রলীগের নেতাদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদকে জানতে হবে কিভাবে ত্যাগের মাধ্যমে বাঁচতে হয়। ত্যাগ ছাড়া একজন রাজনীতিবিদ জনগণকে কিছুই দিতে পারেন না।
শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন। তোমরা যদি কারো কাছ থেকে ভালোবাসা পাও তাহলে তোমাদেরও উচিত তাকে ভালোবাসা দেয়া। তুমি কি পেলে সেটা কোনো বিষয় নয়।’
বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন- খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ একটি উর্বর দেশ। কিন্তু খাদ্যশস্যের সাথে সাথে আগাছাও জন্মায়। তাই ভালো শস্য উৎপাদনের জন্য আগাছা তুলে ফেলতে হবে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকেও আগাছা নির্মূল করার জন্য সংগঠনের নেতাদের প্রতি আহবান জানান।
আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সুলতান শফি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর অনুবাদক অধ্যাপক ফখরুল আলমও অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীদের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে জাতিকে বঞ্চনা মুক্ত করতে সবকিছু করেছেন। তিনি সবসময় বলতেন, বড় কিছু অর্জনের জন্য বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’-এর মোড়কও উন্মোচন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের বর্বরোচিত হত্যাকান্ড শুধু একটি পরিবারকে শেষ করার অথবা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লক্ষ্য ছিলো না। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও বিজয়কে ভূলুন্ঠিত করার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড চালানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই লক্ষ্য নিয়ে পরাজিত শক্তি কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪ জাতীয় নেতাকে হত্যা করে এবং পরিকল্পিতভাবে তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। তারা চেয়েছিলো ভবিষ্যতে যাতে বঙ্গবন্ধুর কোনো উত্তরাধিকারী আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন এবং তাদের অনেককে শাস্তি দেয়া ও কারাগারে পাঠানো হয়। স্বাধীনতার পর অনেক যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায়। বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করে দেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের ভোটাধিকার বাতিল করেন।
জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন ও সামরিক আইনে অধ্যাদেশ জারি করে যুদ্ধাপরাধীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন। এর মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়ে তিনি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির প্রতি সংহতি প্রকাশে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে আসছেন। মুক্তিযুদ্ধের এ পরাজিত শক্তিই ১৫ আগস্টের হত্যাকা- চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি খালেদা জিয়ার কোনো বিশ্বাস নেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধে জাতির বিজয়কে মেনে নিতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুই বোন এ হত্যাকা- থেকে বেঁচে যাওয়ায় খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান আমরা দেশে আসলে জনরোষের ভয়ে শংকিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল সিনিয়র নেতাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জিয়াউর রহমান নির্যাতন ও হত্যা করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু এ ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু যখন কারাবন্দী থাকতেন তখন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রলীগকে সমর্থন ও দিকনির্দেশনা দিতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগকে অর্থ প্রদানের জন্য তাঁর মা নিজের স্বর্ণালংকার বিক্রি করতেও দ্বিধা করেননি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে একটি সুসংগঠিত শক্তি হিসেবে গড়ে তোলেন। এ সংগঠন সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু আন্দোল-সংগ্রামের ব্যাপারে সকল নির্দেশনা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে পাঠাতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি সামরিক জান্তা চারবার বেগম মুজিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা বেগম মুজিবকেও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তাঁর বন্দিদশা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদর্শ ছাড়া কোনো ব্যক্তি দেশ ও জনগণকে কিছুই দিতে পারে না। তিনি বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, ত্যাগ ও একনিষ্ঠতা সম্পর্কে জানতে তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদঃ বাসস