একটি শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশে গ্রেনেড হামলা বিএনপি'র গণতান্ত্রিক মানসিকতা বোঝার জন্য যথেষ্টঃ প্রধানমন্ত্রী

976

Published on আগস্ট 21, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দল এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা চালাতে পারে, সে দলটি যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না, তা প্রমাণের জন্য এটাই যথেষ্ট।’

তিনি আরো বলেন, এই গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি সরকারের নেয়া পদক্ষেপ থেকে পরিষ্কার হয়েছে, তারাই এই হামলার পেছনে জড়িত। এই হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারান এবং শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দেয়ার পর জনসমাবেশে ভাষণ দানকালে এ কথা বলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি সরকার থানায় আমাদের মামলা করতে দেয়নি। এমনকি একটি শোক মিছিলও করতে দেয়নি। সংসদে সরকারি দল এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। বিএনপি সদস্যরা এ ঘটনায় সুনির্দিষ্টভাবে আমার ওপর দোষ চাপায়। আমিই এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছি এবং মানুষ হত্যা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের সঙ্গে যেমন জড়িত ছিলেন, তেমনি তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী এই হামলায় ষড়যন্ত্রকারীদেরকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে শাস্তি দিতে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, অপরাধীরা শাস্তি না পেলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের ঘাতকরা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রকারীরা, ২০০৫ সালে দেশব্যাপী বোমা হামলা এবং ২০১৩ ও ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতরা একই গ্রুপ ও একই আদর্শের অনুসারী। তারা একটি সমৃদ্ধ ও ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ দেখতে চায় না।

স্মৃতি স্তম্ভে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর পর দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানান। দলের প্রধান হিসেবেও তিনি ফুল দেন। এ ছাড়া মন্ত্রিবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ এবং দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও এই হামলায় আহতরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলায় নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটে হযরত শাহজালাল (রা:) এর মাজারে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের উপর হামলাসহ দেশব্যাপী জঙ্গী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু ঘাতকরা প্রকাশ্য দিবালোকে আমাদের উপর যে অপরাধ করেছে দেশবাসী এর আগে কখনো তা দেখেনি। ঘাতকরা ১৩টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ছত্রছায়ায় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার কিছু মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কখনো প্রধানমন্ত্রী অথবা এমনকি ভবিষ্যতে বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারবো না বলে তিনি উল্লেখ করে ছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি বেগম জিয়ার এই বক্তব্যে প্রমাণিত হয় এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি সচেতন ছিলেন এবং পরবর্তী নির্বাচনের আগেই আমাকে হত্যার পরিকল্পনা নেন।’

গ্রেনেড হামলার আলামত নষ্ট করার জন্য বিএনপি সরকারকে দায়ি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হামলাকারীরা আইন প্রয়োগকারীর সংস্থাগুলোর ছত্রছায়ায়ই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং তারা অবিস্ফোরিত গ্রেনেডগুলো নষ্ট করে ফেলে ও গ্রেনেড সরবরাহকারীদের দেশ ত্যাগের সহায়তা করে।

খালেদা জিয়ার লোক দেখানো আবেগ ও দুঃখ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি হাসপাতালের একটি কক্ষে আইভি রহমানের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনকে তালাবদ্ধ রেখে তাকে দেখতে সিএমএইচ-এ যান।

ভয়ংকর গ্রেনেড হামলার ঘটনার স্মরণ করে সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার আইগ্লাস হারানোর কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। আমার চারপাশে মানবঢাল তৈরি করে আওয়ামী লীগ নেতারা আমার জীবন রক্ষা করেন।

এসময় শেখ হাসিনা আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্যই সর্বশক্তিমান আল্লাহ সম্ভবত আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। গ্রেনেড হামলায় সেদিন যদি আমি মারা যেতাম বাংলাদেশে আজকের এই পরিবর্তন সম্ভবত আসতো না এবং নিপীড়িত মানুষের ভাগ্য অপরিবর্তিত থেকে যেতো।

তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনায় জনগণকে উদ্ধার করা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিলো। কিন্তু জনগণকে উদ্ধারের পরিবর্তে পুলিশ হতাহতদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছে তাদের উপর টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপ করেছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তোর সহিংসতায় জড়িত এবং ২০১৩ ও ২০১৫ সালের অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা হামলায় সঙ্গে জড়িতদেরও বিচার করা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর দন্ডপ্রাপ্ত খুনীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনাময় দেশ। উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি যে কোন চক্রান্তের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান।

খবরঃ বাসস

ছবিঃ ফোকাস বাংলা

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত