416
Published on আগস্ট 12, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সাম্প্রতিক দাবি গণতন্ত্রের প্রতি আর একটি আঘাতকে আহ্বান করছে। কিন্তু আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটা রক্ষা করতে পারি। সুশীল সমাজের ওইসব সদস্যের অনেকে উপদেষ্টা হতে, চাকরি পেতে এবং অনুকম্পা লাভের জন্য সামরিক স্বৈরাচারের দরবারে ধর্ণা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডে তথ্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে এসব কথা বলেন।
সরকারের সাফল্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অধিকতর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে গণযোগাযোগ খাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ দমন এবং সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের দুষ্টচক্র নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করছি। কিন্তু জনসচেতনতা ছাড়া এ প্রয়াস সফল হবে না- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় উগ্রবাদীদের চারণ ক্ষেত্র নয়। এদেশে সব ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিবেশে বসবাস করবে।
তিনি তাঁর সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সরকার সমালোচনায় ভীত নয়। গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের শুধরাতে সহায়তা করে। তবে মিডিয়ার এমন কিছু করা উচিত নয়, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ এবং অপশক্তির হাতকে শক্তিশালী করে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমাতুল্লাহ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদের সভাপতিত্বে ডিএফপি’র মহাপরিচালক লিয়াকত আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
১৬-তলা এই ভবনে থাকবে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর (ডিএফপি) গণযোগাযোগ অধিদফতর ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের প্রধান কার্যালয়। এছাড়া এ ভবনে আধুনিক গ্রন্থাগার, গবেষণা কেন্দ্র, চলচ্চিত্র প্রদর্শন হল (ফিল্ম প্রোজেকশন হল), অডিটোরিয়াম ও ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্রও থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮ দশমিক ৬৪ কাঠার উপর তথ্যভবনের নির্মাণ করা নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হবে এবং এটি জাতির কল্যাণ, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিকাশের পাশাপাশি তথ্য সরবরাহ ও বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইলেকট্রোনিক মিডিয়ার জন্য একটি পৃথক ওয়েজবোর্ড গঠনের বিষয় সক্রিয় বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার সাধারণ মানুষের জীবনযাপন উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং সরকারি কর্মকান্ডের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভাগগুলোকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তথ্য ভবনটিকে জনগণের সাথে সরকারের সেতুবন্ধনের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জনগণের সহায়তায় তথ্য ভবনটি সুসজ্জিত করা হবে। গণমাধ্যম ও তথ্য ব্যক্তিত্বরা সবধরনের সুবিধা এখানে পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়াদী উদ্যান, রমনা, সেগুনবাগিচা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক বলয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের মহাপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, তথ্যভবন, শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এক সঙ্গে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য। এ বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি খাতে টিভি চ্যানেল করার অনুমতি দেয়। এ পর্যন্ত ৩২টি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং বর্তমান ২৩টি চ্যানেল চালু রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোনের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, মোবাইল ফোন এখন কারো কাছে বিলাসিতা নয়। ১৯৯৬ সালের আগে মোবাইল ফোন নিয়ে মনোপলি ব্যবসা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই মনোপলি ব্যবসা ভেঙ্গে দিয়ে অনেক অপারেটরের জন্য মোবাইল সেক্টর উন্মুক্ত করে দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন এর সুফল পাচ্ছে এবং ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এখস ১২ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন আইন প্রণয়ন করে। তিনি বলেন, সরকার সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন ও কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি), জাতীয় মাস কম্যুনিকেশন ইনস্টিটিউশন (নিমকো) এবং পিআইবি’র ডিজিটালাইজেশনে কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আধুনিক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সাংবাদিক হয়রানির আইন বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, গত চার বছরে ৬০৮ জন সাংবাদিককে ৩ দশমিক ৮০ কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য স্থায়ী সহায়তা ব্যবস্থার জন্য একটি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।