ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ব্যাপারে দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবেঃ ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

479

Published on জুলাই 27, 2015
  • Details Image

তিনি বলেন, ‘তোমাদের ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ব্যাপারে দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে প্রত্যেকে দেখতে পায় তোমরা জাতিকে কিছু দিতে পারো। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে অন্যান্যের জন্য এ ধরনের পথপ্রদর্শক হতে হবে।’

শেখ হাসিনা অতীতে ছাত্র রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেননি। তিনি বলেন, ‘আমি অতীতে কোন ধরনের অন্যায় কর্মকান্ড সহ্য করিনি এবং ভবিষ্যতেও করবো না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ বিকেলে গণভবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন শাখার অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন এবং সদ্য বিদায়ী সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক নাজুমল আলম।
এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে শেখ রেহানার পুত্র রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক, জয়ের পত্নী ক্রিস্টিন ওভারমেয়ার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।

অতীতে দেশে বহু হামলা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য অপকর্মের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যাতে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে এবং তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য শক্তিশালী সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে।

ছাত্রলীগের সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিল ও স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের মাধ্যমে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যার প্রতিফলন অন্যদের মধ্যেও ঘটতে পারে। তবে আমি জানি না, অন্যরা এটি অনুসরণ করবে কি করবে না।

ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। ছাত্রলীগ নেতারা সর্বাত্মক আন্তরিকতা, সততা ও একতার সঙ্গে কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আমি তোমাদের সাফল্য কামনা করছি।’ তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অটল ও অবিচল থাকতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘এ মহান নেতার আদর্শের অনুসারী সৈনিকরা অতীতে কখনো মাথানত করেনি এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ হয়নি।’

ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংগঠনের ঐতিহ্যবাহী চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং একে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতৃস্থানীয় ছাত্র সংগঠনে উন্নীত করেন।

তিনি বলেন, এ সংগঠনের একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এ ছাত্রলীগই প্রথম ঐতিহাসিক ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর কারিশমাটিক নেতৃত্বের গুণে বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অবিসংবাদিত নেতার এ ভাষণ এখন বিশ্ব ইতিহাসে অন্যতম সেরা ভাষণ হিসেবে স্বীকৃত।

জাতির জনকের দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলী থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়তে হবে। এতে দিকনির্দেশনা রয়েছে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে সহায়ক হবে।

২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জনগণের সকল চাহিদা পূরণ করার পর আর কোনো দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা থাকবে না।

আইসিটি-সহ বিভিন্ন খাতে দেশের সাফল্যের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সকল আর্থ-সামাজিক খাতে অসামান্য সাফল্যের জন্য বিশ্বে বর্তমানে একটি রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।

এ প্রসঙ্গে তিনি এমন একটি পথ তৈরি করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান, যাতে তারা যথাযথ নেতৃত্ব দিতে পারে, সুষ্ঠুভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং দৃঢ় আস্থার সঙ্গে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং জনগণকে সেবা দিতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কি পেয়েছি- এটি বড় বিষয় নয়। আমি কি বিশ্বাস করি- সেটাই বড় বিষয়। ভোগ-বিলাস কিছুই দিতে পারে না। কিন্তু ত্যাগ ও একনিষ্ঠতার মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করা যায়।’

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের এই দিনে তাঁর পুত্র জয়ের জন্মের কথা স্মৃতিচারণ করেন এবং তার নাম রাখার পটভূমি বর্ণনা করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সম্প্রতি স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নির্বাচন গোটা জাতির সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ সংগঠনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে কেক কাটেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত