504
Published on জুলাই 13, 2015প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, মন্ত্রিসভা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অধ্যাদেশ-২০১৫ খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক পরিচালনার জন্য ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি গঠিত হবে।
সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কারণ, সংবিধানের ১৩৩ ধারার অধীনে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয় দেখাশুনার জন্য আইন প্রণয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আলোচনা চলছে। বর্তমানে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপতির জারীকৃত অধ্যাদেশ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রিত হয়।
ভূইঞা বলেন, নতুন আইনের সঙ্গে পুরাতন কোন আইন সাংঘর্ষিক হলে, তা অকার্যকর হবে। নতুন আইনে প্রজাতন্ত্রে কর্মরতদের বিস্তারিত সংজ্ঞা রয়েছে। তবে কয়েক শ্রেণীর কর্মচারী এ আইনের আওতাভুক্ত হবেন না।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক পদ, বিচার বিভাগ, সুপ্রিমকোর্ট, প্রতিরক্ষা বিভাগ, সুশৃঙ্খল বাহিনী, রেলওয়ে, অস্থায়ী কমিশন, স্থানীয় সরকার সংস্থা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব বিধি প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইন কার্যকর করতে নিয়োগ, পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা, ছুটি, বদলী, প্রেষণ ও লিয়েন, শৃঙ্খলা, আচরণ, অবসরকালীন সুবিধা, পদত্যাগ ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, এর আওতায় পদোন্নতির পরীক্ষা, দক্ষতা মূল্যায়ন ও উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষা, সুযোগ-সুবিধা, প্রণোদনা, অক্ষমতা, কল্যাণ এবং প্রতিবন্ধী ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের জন্য কোটা সংরক্ষণেও পৃথক বিধি প্রণীত হবে।
মোশাররাফ হোসাইন বলেন, নতুন আইনে কোন কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এতে চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ কোন অবদানের জন্য পুরস্কার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স ১৯৭৪ সালের সরকারি কর্মচারী আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে এবং এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পুনরায় মন্ত্রিসভায় পেশের আগে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অধ্যাদেশ-২০১৫ খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ভবিষ্যতে অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাণিজ্যিক পরিচালনার জন্য একটি পাবলিক কোম্পানী গঠন করতে এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণতঃ ‘কোম্পানী আইনে’ সকল বাণিজ্যিক কোম্পানী গঠন করা হয়। তবে, এই ধরণের একটি উচ্চ প্রযুক্তির, জটিল ও ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগকৃত পারমাণবিক প্রকল্পের বাণিজ্যিক পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ কোম্পানী গঠন করা জরুরি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রিসভা এ আইনটি অনুমোদন করেছে।
তিনি বলেন, পারমাণবিক প্রকল্পগুলোর মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের (বিএইসি) এবং প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোম্পানী বিডি লিমিটেড’।
কোম্পানীর নূন্যতম সাত এবং সর্বোচ্চ ১২ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন এবং বিএইসি পদাধিকার বলে পরিচালক হিসেবে থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি বিষয়টিকে অতীব জরুরি বিবেচনা করায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলমান না থাকায় আইনটি একটি অধ্যাদেশ হিসেবে প্রণয়ন করা হচ্ছে। পরে, এটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘সেনাবাহিনী (সংশোধন) আইন-২০১৫’ এবং ‘বিমান বাহিনী (সংশোধন) আইন-২০১৫’ নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়। সেনা প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধানের নাম ও পদবির বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য এতে প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৯৭৬ সালে সেনাবাহিনী আইনে একটি সংশোধনী এনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের নাম ও পদবি পরিবর্তন করে ‘কমান্ডার ইন চীফ অভ আর্মি স্টাফ’ এর পরিবর্তে ‘চীফ অভ আর্মি স্টাফ’ করা হয়েছিল। একইভাবে, ‘বিমান বাহিনী’ আইনেও পরিবর্তন করে ‘কমান্ডার ইন চীফ অভ এয়ার ফোর্স’ এর পরিবর্তে ‘চীফ অভ এয়ারফোর্স স্টাফ’ করা হয়েছিল।
কিন্তু ২০১০ সালে সুপ্রীম কোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের পরবর্তী দুটি সামরিক শাসন অবৈধ ঘোষণা করার ফলে উভয় সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়। নতুন সংশোধনী সেনা প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধানের নাম ও পদবি সংশ্লিষ্ট শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করবে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এর অধীনে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি-২০১৫ খসড়া অনুমোদন করেছে যার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্যোগ প্রস্তুতি, ঝুঁকি হ্রাস, সহিষ্ণুতার সংস্কৃতির বিকাশ, প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ বৃদ্ধি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা।