টেকসই সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবেশ সুরক্ষার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

383

Published on জুলাই 12, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ‘জগৎ মাতার’ সুরক্ষায় আমরা সবাই যত্নবান হলে সবুজ প্রবৃদ্ধি বিকাশের মাধ্যমে দেশের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারি।

তিনি রোববার ঢাকায় খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০১৫ এবং জাতীয় বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০১৫ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এ পৃথিবীকে যতটুকু যতেœ লালন করব, পৃথিবী ঠিক ততটুকু সম্ভাবনা ধারণ করবে আমাদের জন্য। কাজেই প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণ আমাদের নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের একার পক্ষে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার মতো কঠিন কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্য তিনি দেশের সব নাগরিকেকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন ও পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগী হতে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেককে অন্ততঃ ১টি বনজ, ১টি ফলদ ও ১টি ভেষজ বৃক্ষের চারা রোপণের আহ্বান জানান।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জেকব, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রাইসুল আলম মন্ডল বক্তৃতা করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মুকিত মজুমদারকে পরিবেশ পদক-২০১৫ প্রদান করেন।

তিনি ব্যক্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার সংস্থা, সরকারি দফতর ও বিভিন্ন ধরনের এনজিও’র বৃক্ষরোপণের জন্য বঙ্গবন্ধু বন্য প্রাণী সংরক্ষণ পদক ২০১৫ এবং প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পদক ২০১৪ প্রদান করেন।

এ বছর বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এম মনিরুল হাসান ও র্যা পিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব), নওগাঁ ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা নিশান-এর পরিচালক মহিদুল রহমান এবং রাজশাহীর পুটিয়ার এম আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধু বন্য প্রাণী সংরক্ষণ পদক লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রী সামাজিক বনায়নে নওগাঁ ও গাজীপুরের দু’জনকে মুনাফার চেক প্রদান করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের চত্বরে একটি হৈমন্তীর চারা রোপণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে বৃক্ষমেলা-২০১৫ উদ্বোধন করেন।

জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশেও এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘ শত কোটি জনের অপার স্বপ্ন, একটি বিশ্ব করি না নিঃস্ব’। পাশাপাশি জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০১৫ পালিত হচ্ছে। এ দিবসের শ্লোগান ‘পাহাড় উপকূল সমতলে, গাছ লাগাই সবাই মিলে’।

নগরীর গুলশান ও ধনমন্ডি এই দুইটি লেকের অবৈধ দখল ও দূষণ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই এলাকায় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে লেকের বিস্তার ও গভীরতা বজায় রাখা হবে।

তবে কয়েক বছরে লেকের উল্লেখযোগ্য অবৈধ দখল অপসারণ করা হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে বলেন, অনেক বাসা-বাড়ির সুয়ারেজ সিস্টেম লেকের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছে।

তিনি স্থানীয় লোকদের বিশেষ করে সেখানে বসবাসকারী এলিট শ্রেণীকে সমস্যার প্রতি তাদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সম্ভাব্য যে কোন বন্যা মোকাবেলায় লেকের ও সুয়ারেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছের খাল খননে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ ও বনায়ন আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত। এ কারণে সরকার সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদ্যমান বনভূমি সংরক্ষণ এবং নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের বনভূমির পরিমাণ ২০০৯ সাল থেকে বিগত ৬ বছরে বেড়ে ১৭ শতাংশ হয়েছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে- বনভূমি ২৫ শতাংশে উন্নীত করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিষয়গুলোকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করেছি। এজন্য পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা এবং প্রাসঙ্গিক বিধানাবলী প্রণয়ন, প্রবর্তন ও যুগোপযোগী করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম বহুলাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন সংরক্ষণ, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা এবং বনের কার্বন মজুদ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নীতিমালা তৈরি করে সুন্দরবনসহ ১৫টি বনের কার্বন মজুদ নির্ণয় এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় বনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কার্বন ক্রেডিট বিক্রয় ও পেমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (পিইএস) প্রবর্তনের লক্ষে বিগত ৬ বছরে দেশে রক্ষিত এলাকার সংখ্যা ৩৮টিতে উন্নীত করা হয়েছে।

বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে। রিও+২০ সম্মেলনসহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিকর দেশগুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও এই দুর্যোগের বাংলাদেশ সর্বোত্তম অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সহযোগিতার ব্যাপারে অনেক উন্নত দেশ এবং সংস্থা বহু প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করেছে। তবে ইইউ বাদে তাদের বেশির ভাগ দেশ অঙ্গীকার পূরণ করেনি।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব তহবিল থেকে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডে ২৬৩টি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণ রোধে ৩ আর (R) অর্থাৎ Reduce, Reuse and Recycle (হ্রাস, পুনঃব্যবহার, পুনঃচক্রায়ন) কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্পমালিকদের বর্জ্যব্যবস্থাপনা উদ্যোগে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে।

বর্জ্যনির্গতকারী সকল শিল্পের জন্য সরকার ইটিপি প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক করেছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্যোক্তাগণকে নিজস্ব প্রচেষ্টায় পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত পরিবেশগত নিরীক্ষা সম্পাদন করে পরিবেশ অধিদফতরকে নিয়মিত অবহিত করার আহ্বান জানান।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মিমাংসার ফলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর আমাদের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই বিপুল সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত