549
Published on জুন 30, 2015গত ৪ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৫ সংসদে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই বাজেট পাস করা হয়।
বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবি প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
প্রধান বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যগণ মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে মোট ৫২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে ৭টি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
এর পর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৫ পাসের মাধ্যমে ২০১৫-’১৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।
গত ৮ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধীদলের ২১৯ জন সদস্য ১৮ কার্যদিবসে মোট ৫৮ ঘণ্টা মূল বাজেট ও সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সরকারি দলের ১৫৩, ওয়ার্কার্স পার্টির ৫ জন, জাসদের ৫ জন, তরিকত ফেডারেশনের ১ জন, জাতীয় পার্টির ৩০ জন, জেপির ১ জন, বিএনএফের ১ জন ও স্বতন্ত্র ১০ জন রয়েছে।
এর মধ্যে ২০১৪-১৫’ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ২ কার্যদিবসে ১৩ জন সদস্য ৪ ঘন্টা ১৫ মিনিট এবং মূল বাজেটের ওপর ১৬ কার্যদিবসে ২০৬ জন সরকার ও বিরোধীদলের সদস্য মোট ৫৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পর এটি দ্বিতীয় বাজেট।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১২ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০ দশমিক ৩ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ, বৈদেশিক অনুদান ৫ হাজর ৮শ’ কোটি টাকা।
বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা অথাৎ এখাতে মোট বরাদ্দ ১ লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০১৯-২০ অর্থবছর নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার সংসদে অর্থবিল ২০১৫ পাস করা হয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়। মহিলা ও ৬৫ বছর উর্ধ্ব প্রবীণদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কর হ্রাস করা হয় ।
বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যার মধ্যে মানব সম্পদ খাত- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খতে ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ- যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে।
এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৮ শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ২ দশমিক ২ শতাংশ , সুদ পরিশোধ বাবদ ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে অবশিষ্ট ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাজেটে ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপরই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবস্থান।