বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

444

Published on জুন 29, 2015
  • Details Image

তিনি গতকাল সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।

প্রস্তাবিত বাজেটকে জনকল্যাণমুখী আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাজেট জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণের পথ সুগম করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

শত প্রতিকুলতার মাঝেও ভোট দিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জনগণ এ সরকারকে নির্বাচিত না করলে এ বাজেট উপস্থাপন সম্ভব হতো না।

সপ্তমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তার এ বাজেট বাংলাদেশকে প্রতি পদে পদে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে বাংলাদেশকে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে, যা ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে বাঙালি জাতিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আজ আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র তথ্যমতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১ বছরের ব্যবধানে ৫৮তম স্থান থেকে ১৪ ধাপ এগিয়ে এখন ৪৪তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অর্থনৈতিকভাবে তারা স্বাবলম্বিতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রয় ক্ষমতার যে সমতা ভিত্তিতে বাংলাদেশ ২০১৩ সালের ৩৬তম অবস্থান থেকে তিন ধাপ এগিয়ে ২০১৫ সালে ৩৩তম অবস্থানে এসেছে। বাংলাদেশ স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেই এবার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করতে পেরেছে। ৬ বছরে বাজেটের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, বাজেটের আকার বড় হলেও এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। বিগত অর্থবছরে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য, লাগাতার ৩ মাস হরতাল-অবরোধের পরেও সরকার বাজেটের ৯৫.৬৭ ভাগ বাস্তবায়ন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের কল্যাণের জন্য এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জনগণের সেবা এবং জনগণের জন্য কাজ করাই হচ্ছে এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। সে প্রত্যাশা পূরণই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করে, তখন দেশে বিনিয়োগ বাড়ে, অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, গরীব মানুষের উন্নয়ন হয়। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে।

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশের মানুষের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে। ২১ বছর মানুষ অনেক কষ্ট করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন মানুষ বুঝতে পারে, জনগণের জন্য সরকার কাজ করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল স্বর্ণ যুগ। পরবর্তী ৭ বছর দেশের মানুষের জীবনে আবারও অমানিষার অন্ধকার নেমে আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ধরনের আর্থ-সামাজিক সূচকে বর্তমান সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে ছিল ৪০ শতাংশ, ২০১৫ সালে তা ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যদের সরকার বিনামূল্যে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও গত ৫ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং এ বছর তা ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি এখন ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশে রয়েছে। চলতি বছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়াবে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ দশমিক ৭ বছরে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মানুষের পুষ্টি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার মাছ, মাংস ও ডিমসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে বর্তমানে দেশের ৭০ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৭২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এরপরও সোলার, পারমাণবিক ও কয়লা ভিত্তিক বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠায় নেপাল ও ভুটান থেকে পানি বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ সৃষ্টি রয়েছে।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব অনেক। ফলে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি দিনাজপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত দিনাজপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি না হয়, তাহলে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি কিভাবে করবে। বাংলাদেশের উন্নতি অনেকের সহ্য হয় না বলেই তারা এ ধরনের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান কৃষকবান্ধক সরকার কৃষককে ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকরা উৎপাদনমুখী হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালে শেষ হবে এবং আরো ১৩টি বৃহৎ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় ১৬ হাজার ৪৩৮ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। এসব ক্লিনিকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। মাতৃমৃত্যু প্রতিহাজারে ১ দশমিক ৭ জন এবং শিশুমৃত্যু ৩৩ জনে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ২৭ লাখ ২২ হাজার ৫শ’ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক মানুষ ৪শ’ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছে। ৪ লাখ প্রতিবন্ধী বর্তমানে ভাতা পাচ্ছে। এ হার ৬ লাখে উন্নীত করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ৪ হাজার ৫৪৭টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে মানুষকে তথ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ১২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষ মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ৪ কোটি ৫৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। কৃষি খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। সারাদেশে ২৪৫টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে হোয়াইট ওয়াশ করার পর ভারতের সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট সিরিজ জয় করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে শিগগিরই সম্মাননা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। যুব সমাজকে শেয়ারবাজার সম্পর্কে সচেতন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ক্যান্সার রোগীদের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে সকল শুল্ক কর প্রত্যাহার, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি’র ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ কর কমিয়ে ৭ দশমিক ৫-এ আনা, ইউনানী ও ভেষজ’র ওষুধের মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার, পোল্ট্রি শিল্পের আয়ের প্রথম ১৯ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফ করে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ ও ৩০ লাখের অধিক অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করার প্রস্তাব করেন। রফতানি আয়ের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার ০ দশমিক ৬০ শতাংশ করার সুপারিশ করেন। মাছ চাষের ওপর অর্জিত আয়ের প্রথম ১৯ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফ করে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ ও ৩০ লাখের অধিক অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করার প্রস্তাব করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত