ভারত ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও অভিন্ন ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন নরেন্দ্র মোদি

623

Published on জুন 7, 2015
  • Details Image

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভারতীয় হাইকমিশনের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতাকালে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আপনাদের পাশে আছি। ভারতের জন্য আমার যে স্বপ্ন, বাংলাদেশের জন্যও আমার একই স্বপ্ন রয়েছে।’

তিনি বলেন, অভিন্ন ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও সংস্কৃতির ফলে সৃষ্ট ঐক্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তি। তিনি আরও বলেন, কেউ কখনো কি চিন্তা করেছিল যে, দু’টি দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা এক ব্যক্তি হবেন। এখানে আমাদের ঐক্যের শক্তি।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গ ও বিদেশী কূটনীতিকরা যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি বক্তৃতাকালে নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।

নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে উপ-আঞ্চলিক জোটবদ্ধ হয়ে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট উন্নয়নের জন্য একসাথে চলার কোন বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোসহ সারাবিশ্ব আজ আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিশ্বায়নের এই যুগে কোন দেশেরই আর একলা চলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।

সন্ত্রাসের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের জিরো টলারেন্সের ভুয়শী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একসাথে চলতে পারি তাহলে সন্ত্রাসসহ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েরই সমাধান করতে পারবো। সারা দুনিয়াও স্বীকার করবে যে, ওরা সব করতে পারে এবং পারবে।’

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিখি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত ঝর্ণা ধারা রায় চৌধুরী।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, রাজনৈতিক সংকট, সন্ত্রাস-সব দেশেই রয়েছে। তবে আমরা সম্মিলিতভাবে পাশাপাশি চলে যদি কাজ করতে পারি তাহলে সব সমস্যারই সামাধান সম্ভব।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী অবস্থান ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাসে সাফল্য, নারী শিক্ষার অগ্রগতি, তৈরি পোষাক শিল্পের আশাতীত বিকাশ প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেন।

এছাড়াও তাঁর বক্তৃতায় ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট প্রতিফলিত হয়। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর কৃতিত্বপূর্ন অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষের ভূমিকা তুলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের অর্ন্তভূক্তির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

সীমান্তে মানুষ হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোন মৃত্যুই কাম্য নয়, এটি মানবতার চরম লঙ্ঘন, সে যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন। তিনি এ বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস ব্যক্ত করেন।’

নরেন্দ্র মোদী বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে বলেন, ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাংলাদেশের সহযোযোগিতা ছাড়া সম্ভব হত না। বাংলাদেরশের বন্দর ব্যবহার করেই ভারী যন্ত্রপাতি সেখানে নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে এবং সেখান থেকেই বাংলাদেশকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।এখন একশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাচ্ছে, ভবিষ্যতে এর পরিমান এক হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।

ছিটমহল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি শুধু জমি বিনিময় নয়, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের বন্ধন স্থাপন। সারা পৃথিবী যেখানে জমি নিয়ে বিরোধে লিপ্ত, সেখানে বাংলাদেশ ও ভারত সমগ্র বিশ্বের সামনে প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিস্তার পানি বন্টন প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘পাখি, নদীর পানি এবং প্রকৃতির বাতাসের চলাচলে কোন ভিসা লাগে না, এগুলো বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির সম্পদ, এ নিয়ে রাজনীতি চলে না।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে গঙ্গার পানি চুক্তি রয়েছে। অবশ্যই তিস্তা সমস্যারও সমাধান হবে। তবে, এ বিষয়ে বিশ্বাস হারালে চলবে না।

সমুদ্র সীমা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ভারত দুটি পার্শ্ববর্তী ভাতৃপ্রতীম দেশের স্থল সীমা, আকাশ সীমা চিন্থিত করা ছিল, এবার সমুদ্র সীমাও চিন্থিত করা হলো। এখন দু’দেশেরই সামুদ্রিক অর্থনিতির (ব্লু ইকোনমি) ওপর জোর দিতে হবে। তিনি সামুদ্রিক অর্থনীতির সম্পর্কে একাডেমিক জ্ঞান চর্চায় ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ে সামুদ্রিক বিজ্ঞান (ওশনোগ্রাফী) বিভাগকে সমৃদ্ধ করতে ভারত সহোযোগিতা করবে।

বক্তব্যের শুরুতেই বাংলায় কথা বলেন মোদি। তিনি বলেন, কেমন আছো? আমরা তোমার সঙ্গে আছি, আমরা তোমাদের সঙ্গে নিয়ে চলবো। আমার বাংলা কেমন?

বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রত্যয় জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দু’দিনের বাংলাদেশ সফর আমার সফল হয়েছে। আমাকে যদি কেউ জিঞ্জেস করে তাহলে এক বাক্যে বলতে পারি, আমি সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছি, আবারো বলবো বাংলাদেশের সাথেই আছি।’

তিনি বলেন, এ অনুষ্ঠান তার দু’দিনের বাংলাদেশ সফরের শেষ কর্মসূচি হলেও তার মনে হচ্ছে সফর শুরু করতে চলেছেন মাত্র। তিনি বলেন, আমার এ দু'দিনের সফরে বাংলাদেশের নাগরিক, সরকার, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সম্মান জানিয়েছেন তা নরেন্দ্র মোদি নামে শুধু এক ব্যক্তির নয়, সমগ্র সোয়াশো কোটি ভারতবাসীর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমার পূর্ণ যোগাযোগ রয়েছে। এ যোগাযোগ আমার জীবন ও আমার রাজনৈতিক জীবনে যার কাছ থেকে পরশ পেয়েছি সেই বাজপেয়িকে (ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী) বাংলাদেশ আজ সম্মান জানালো। এই সম্মান পেয়েছি একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে।

নরেন্দ্র মোদি জীবনান্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে- দুটি লাইন দিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন।

ছবিঃ ফোকাস বাংলা নিউজ

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত