538
Published on মে 30, 2015মানুষ পোড়ানো এবং নৈরাজ্যের বিস্তারসহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে তাদের ক্ষমা নেই।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন তারা পেট্রোল বোমা অথবা ককটেল ছুঁড়ে মানুষ হত্যা করছে। আমি বিএনপি-জামায়াতকে আহবান জানাতে চাই তারা যেন মানুষ পোড়ানো এবং হত্যা থেকে বিরত থাকে। মানুষ পোড়ানো অথবা হত্যা করার তাদের কোন অধিকার নেই।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে ফেনীতে বোমা বিস্ফোরণে একটি চোখ হারানো এসএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অনিকের অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলবে তাদের কোন ক্ষমা নেই।
আমি আশা করি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যদি এর পুনরাবৃত্তি ঘটে, অপরাধীকে ছাড়বো না। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার সকালে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে এসএসসি ও সমমানের চলতি বছরের পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণের পর এ কথা বলেন।
এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আনুষ্ঠানিকভাবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
পরে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, ১টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ মোট ১০টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানগণ তাদের নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ বিষয়ে রাঙ্গামাটি ও নীলফামারিতে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকবৃন্দ, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল-অবরোধ ডেকে বাধা সৃষ্টি না করলে পরীক্ষায় পাসের হার আরো বেশি হতো।
বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক আন্দোলন এবং অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সত্ত্বেও পরীক্ষার ফল ভাল হয়েছে। বৈরি পরিস্থিতিতেও পরীক্ষার্থীরা সফল হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য কৃতকার্য হওয়া পরীক্ষার্থী এবং শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী। তাদেরকে নুন্যতম সুযোগ দেয়া হলে, তারা ভাল করতে পারে।
তিনি পরীক্ষার ৫৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল ঘোষণাকে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরীত করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সফল হব বলে আমরা বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ, বছরের প্রথমদিনে বিনামূল্যে বই বিতরণ, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিল গঠন ও বিপুলসংখ্যক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপন করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ।
শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণের উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়েতের হরতাল-অবরোধ না দিলে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা আরো ভাল হতো। তারপরও এ অবস্থার মধ্যেই আমরা দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ করে যাতে চাকরি পায়, এ জন্য সরকার বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ১৯৯৬ সালের বিগত সরকার দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল।
শেখ হাসিনা দেশ দারিদ্র্যমুক্ত করতে শিক্ষাকে প্রধান যন্ত্র বলে বর্ণনা করে বলেন, তাঁর সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি আলোকিত ও মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়তে ভাল ফলাফল করার জন্য লেখাপড়ায় অধিক মনোযোগি হতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।