খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

476

Published on মে 30, 2015
  • Details Image

আজ বিকেলে এখানে তিন দিনব্যাপী ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলন ২০১৫’ এর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে আঞ্চলিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং অনতি বিলম্বে সার্ক খাদ্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া থেকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে সম্মিলিত উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই এবং নেপালের সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্প আমাদের আঞ্চলিক খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।’

এন্টি পভার্টি প্লাটফর্ম (এপিপি) এর উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থি। এপিপি দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ৪৩টি সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ফোরাম।

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান।

খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। বক্তৃতা করেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আয়োজক কমিটির সচিব মহসিন আলীও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্ক খাদ্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাজের উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দ যথাশিগগির সম্ভব এ খাদ্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার একজন মানুষকেও যেন খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারাতে না হয়, সে জন্য সার্ক খাদ্য ব্যাংক হোক বিপদের বন্ধু।’ শস্যবীজের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের কৃষকদের অংশগ্রহন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সার্ক বীজ ব্যাংক স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যও তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা এই ৫টি অত্যন্ত মৌলিক চাহিদার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে খাদ্য।

তিনি বলেন, সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য ও অগ্রগতি অর্জন করা সত্ত্বেও আজও এ বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, এ বিশ্বে এখনো ৭.৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০৫ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। প্রতি নয় জনে একজন প্রয়োজনীয় খাদ্য পায় না এবং এর মধ্যে ৭৯১ মিলিয়ন ক্ষুধার্থ মানুষের বাস উন্নয়নশীল দেশে। কেবল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেই বাস করছে ২৭৬.৪ মিলিয়ন ক্ষুধার্থ মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য-শস্য উৎপাদনের ওপরই কেবল খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভরশীল নয়। সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা একটি জটিল কাজ। দারিদ্র্য, ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বণ্টন ব্যবস্থা, সংঘাত, অধিক জনসংখ্যা, খাদ্য ও কৃষি নীতি, জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদি খাদ্য প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূর করতে প্রতি বছর ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ ব্যয় মার্কিন সামরিক বাহিনীর বাজেটের মাত্র ৮ দিনের ব্যয়ের সমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে সামরিক খাতে প্রায় ১.৭৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ ব্যয় হয়, যা বিশ্বের জিডিপি’র প্রায় ২.৫ শতাংশ। এ অর্থের একটি অংশই বিশ্ব থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র দূর করার জন্য যথেষ্ট।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামজিক সুরক্ষা খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩৮.৩৪৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করেছে এবং ইতোমধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। খাদ্য সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ১.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ও মানব উন্নয়নই দারিদ্র দূরীকরণের সর্বোত্তম পন্থা। তিনি বলেন, তাই এসব খাতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলো আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর জন্য ৩০৭.৫১ বিলিয়ন টাকা (৩.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন, যা এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র দূরীকরণে সহায়ক হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, “দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের অঙ্গীকার। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে খাদ্য অপচয় বন্ধের আহবান জানাই।”

অনুষ্ঠানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় লাখ লাখ শিশুকে ক্ষুধার্থ অবস্থায় রাখা হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং উন্নয়নের জন্য সকল উদ্যোগ হাতে হাত রেখে চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জনগণকে তাদের খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গতিশীল আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত