488
Published on মে 26, 2015প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভারতীয় ঋণ সহায়তায় এ দুটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় ।
সভায় ৫৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ মোট ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পগুলোর অর্থায়নে সরকার দেবে ২২৭০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে আসবে ৩৫৬৭ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩১ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। ৯ প্রকল্পের মধ্যে নতুন হচ্ছে ৬টি ও সংশোধিত ৩টি ।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বলেন, খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইন স্থাপনের জন্য অনুমোদিত সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮০১ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে গৃহিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২১ কোটি টাকা। এর ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘রেলপথের এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের ফলে রূপসা নদীতে প্রায় ৭১৭ মিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ এবং প্রকল্পটিতে রেললাইনের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটির জন্য আরো কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর আওতায় এখন খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন ও ২১ কিলোমিটার লুপ লাইন তৈরি হবে। ৬৭৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও রূপসা রেলসেতুসহ এতে প্রায় ৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া রয়েছে অন্যান্য ব্যয়।’
মুস্তফা কামাল বলেন, সংশোধিত এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ভারত সরকার ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা । বাকি ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে ।
একনেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনরায় চালুর জন্য ৬৭৮ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২২ কোটি টাকা ও অবশিষ্ট ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে ভারত সরকার । রেল চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ২০০২ সাল থেকে রেলপথটি বন্ধ রয়েছে।
সাড়ে ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথকে আরো ৯ কিলোমিটার বাড়িয়ে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত করে চালু করলে ভবিষ্যৎতে এটি আঞ্চলিক রেলওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এই উভয় নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে পারবে। এতে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
সভায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মিল্কভিটায় আরো একটি গুঁড়ো দুধ তৈরির প্ল্যান্ট স্থাপনে ‘সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে মিল্কভিটা। নতুন এ প্ল্যান্টটি স্থাপিত হলে গুড়ো দুধের উৎপাদন দৈনিক ২৫ মেট্রিক টন বেড়ে যাবে। এতে গুড়ো দুধ আমদানির পরিমাণ হ্রাস পাবে। বাংলাদেশ এখন বছরে প্রায় ২১ হাজার ৭শ’ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ আমদানি করে। এ হিসেবে গড়ে দৈনিক আমদানির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫৯ মেট্রিক টন। বর্তমানে মিল্কভিটায় গুঁড়ো দুধ তৈরির একমাত্র প্ল্যান্টটির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের গুঁড়ো দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন,‘শাহজাদপুরে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৫ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মিল্কভিটা আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারজাত করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় ক্ষুদ্র খামারীদের। বিশেষকরে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দুধ উৎপাদনের ভরা মৌসুমে অতিরিক্ত দুধ বাজারজাতকরণে বেশী সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে রয়েছে যাতায়াতের সমস্যা। এজন্য এ এলাকায় উৎপাদিত অতিরিক্ত কাঁচা দুধ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে দৈনিক ২৫ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় দেশের ২২টি জেলার ১০৬টি উপজেলার ১ হাজার ৩০টি ইউনিয়নের গ্রামীণ অতি দরিদ্র মহিলার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ৮৫৩ কোটি টাকায় ’স¤া¢বনাময় উৎপাদনশীল কাজে নারীদের সক্ষমতার উন্নয়ন ’ সংক্ষেপে ’স্বপ্ন নামের অনুমোদিত প্রকল্পে সরকার ২১৩ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ৬৪০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা ইউএনডিপি ।
মন্ত্রী বলেন, এটি সামাজিক নিরাপত্তামূলক প্রকল্প। কাজের সুযোগ না থাকার মৌসুমে বছরের এমন সময়ে দরিদ্র মহিলাদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আওতায় গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কাজে দরিদ্র মহিলাদের দৈনিক ২০০ টাকা করে মজুরি দেয়া হবে। এ থেকে দৈনিক ৫০ টাকা ব্যাংকে জমা থাকবে।
এছাড়া সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে ৬১ কোটি টাকায় ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নসহ সৌন্দর্যবর্ধন, ৫৬ কোটি টাকায় ‘জামালপুর শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ’, ৮৮ কোটি টাকায় ‘কন্সট্রাকশন অব কোরস অব মিলিটারি পুলিশ সেন্টার এন্ড স্কুল এট সাভার ক্যান্টনমেন্ট’, ২১৭ কোটি টাকায় ‘হ্যাচারীসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার স্থাপন’এবং ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মানিকনগরে মেঘনা নদীর বামতীরে প্রতিরক্ষামূলক কাজ’।
সভায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।