দালালদের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

400

Published on মে 24, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দালালদের পাশাপাশি যারা অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে তারা তাদের জীবন বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়ার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন করছে। আমি মনে করি দালালদের পাশাপাশি ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশগামীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ হতে পারে।

শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশ দেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন।

বেআইনী প্রক্রিয়ায় বিদেশ যাওয়া বন্ধে প্রচারণা চালাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধ পথে বিদেশে যেতে দালালদের টাকা দেয়ার প্রয়োজন নেই- এজন্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ এভাবে দেশত্যাগ করে তারা বিপদে পড়ছে।

তিনি বলেন, যারা সাগরে ভেসে দেশ ছাড়ছে, তারা নিজেরাও জানে না যে তারা কোথায় যাচ্ছে। তাদের মৃতদেহ বনে-জঙ্গলে পাওয়া যাচ্ছে- এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

বৈধভাবে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিদেশে যেতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ অভিবাসনে দালালদের বিপুল অঙ্কের অর্থ দেয়ার পরও অবৈধ অভিবাসীরা অনিশ্চিত গন্তব্যে সামিল হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই অভাবের তাড়নায় এভাবে দেশ ছাড়ছে, একথা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তারা সোনার হরিণের পিছনে ছুটছে। তারা মনে করছে বিদেশে যেতে পারলে তারা অনেক টাকা উপার্জন করবে।

তিনি বলেন, টাকার সন্ধানে অবৈধ পন্থায় পরদেশে পাড়ি দেয়া এই মানুষগুলো মানসিকভাবে অসুস্থ। এভাবে তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে বা তাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বরং তারা বিদেশে যাওয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দালালদের দিচ্ছে তা দিয়ে তারা দেশে কিছু করলে অনেক সুন্দর জীবনযাপন করতে পারতো।

বাংলাদেশী শ্রমিক ও বিদেশ গমনেচ্ছুদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে যেতে যাতে ঘর-বাড়ী বিক্রি করতে না হয় এজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে যেতে ও অবস্থানকালে যেন কোনরকম হয়রানির শিকার হতে না হয় এজন্য তাদের প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৬ লাখ এবং সৌদি আরবে ৮ লাখেরও বেশি অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়মিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়েছে। বিদেশগামীদের হয়রানিও অনেক কমেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারকে শ্রমিক বান্ধব অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,তাঁর সরকার শ্রমিক শ্রেণীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং এ লক্ষ্যে দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে ২৯টি শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্র সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে একটি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন এবং ১৯৭৪ সালের শ্রম পরিদপ্তর ও ট্রেড ইউনিয় রেজিস্ট্রেশন পরিদপ্তরকে একীভূত করে শ্রম পরিদপ্তর গঠন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধনের মাধ্যমে সময়োপযোগী এবং শ্রমিকদের স্বার্থে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে শ্রম আইন সংশোধন করেছে। এ সংশোধনীর পর গার্মেন্টস সেক্টরে এ পর্যন্ত ৩১৮টি ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন খাতে ৭ হাজার ৪৬৭টি রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ এবং দেশের শিল্পায়ন, কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন ও বহিঃবাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। গৃহ কর্মে সংশ্লিষ্ট বিপুলসংখ্যক শ্রম গোষ্ঠীকে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতের পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের অবসরের বয়স সীমাও ৫৭ থেক ৬০ বছরে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা কিংবা নৈতিকতার জন্য হানিকর এমন ৩৮টি কাজকে তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করে শিশু শ্রম নীতিমালা ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

শিশু শ্রম নিরসনে ইতোমধ্যে ৩টি পর্যায়ে ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পসহ সকল শিল্পে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। এ অধিদফতরের ৩২টি পরিদর্শন টিম ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টসসহ মোট ১৭ হাজার ৯৮০টি শিল্প-কারখানা পরিদর্শন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নির্ধারণের জন্য জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন ২০১০ গঠন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে দেশের শ্রমঘন ও সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী আরএমজি সেক্টরের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১৬৬২ টাকা থেকে ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩ হাজার টাকা পুনঃনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করেছে।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকা থেকে ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে তাজরিন ফ্যাসন, নিমতলী অগ্নিকান্ড এবং রানা প্লাজা ধসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এসব ঘটনায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

বিদেশীরা বাংলাদেশের মিল-ফ্যাক্টরির কর্মপরিবেশ ও মজুরি বিষয়ে ‘খবরদারি’ করেন উল্লেখ করে তিনি তাদের তীব্র সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, হতে পারে ওইসব দেশের মতো বাংলাদেশের শ্রমিকরা সুযোগ-সুবিধা পায়না। যারা বাংলাদেশে এ ব্যাপারে খবরদারি করে সেই সব দেশে কেউ যদি তাদের কর্মক্ষেত্রে যেকোন পর্যায়ের আন্দোলন করে তাহলে তাকে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ড, এমনকি হসপিটাল ভষ্মীভূত ও আগুনে স্কুল শিশুদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমরা জনগণকে উপেক্ষা করতে পারি না এবং আমরা কৃষক ও শ্রমিকদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ক্ষমতায় এসেছি, আনন্দ উপভোগ করতে আসিনি।

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা যাতে বিদেশে কর্মসংস্থানে যেতে পারে সে জন্য ওই দেশের ভাষা, আইন ও কাজের বিষয় প্রশিক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তিনি বলেন, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সরকার প্রায় সাড়ে ৮ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার যুবকের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, জামানত মুক্ত ঋণ বিতরণ, ন্যাশনাল সার্ভিস গ্যারিন্টি স্কিম, তৃণমুলে তথ্য সেবা কার্যক্রম, একটি বাড়ি একটি খামার, কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে আমরা ব্যাপক আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।

কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বিদ্যুৎসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর সরকার অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশকে মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জনগণ দরিদ্র হতে পারে তবে তাঁরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত