402
Published on মে 23, 2015প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় এখানে ফায়ার সার্ভিসের সিভিল ডিফেন্স স্টেশন উদ্বোধন এবং শহীদ শামসুন্নেছা আরজু মনি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন।
তিনি বলেন, মনে হতে পারে যে দুর্যোগ শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের জনগণ মানবসৃষ্ট যে দুর্যোগের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, তা আবার আসবে না তা মোটেও নিশ্চিত নয়।
শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে তার বাড়িতে ফিরে যেতে এবং দুর্নীতি মামলায় আদালতে উপস্থিত হতে বাধ্য করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অগণতান্ত্রিক প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দেশের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছি তখন তারা সমস্যার সৃষ্টি করছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।
স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, স্বাস্থ্য সচিব মঞ্জুরুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করার জন্য ক্ষমতায় এসেছে। এ লক্ষ্যেই সকল উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সরকার দেশের জনগণকে একটি সমৃদ্ধ জীবন দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
হাজারীবাগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই এলাকাটি লুটেরা ও অপরাধীদের ঘাঁটি ছিল। প্রকল্পের নামে তারা সরকারি অর্থ লুট এবং নির্বিচারে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে।
শেখ হাসিনা গত মাসে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকনকে নির্বাচিত করায় হাজারীবাগের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচনে জনগণের এই রায় ভাংচুর, হত্যা, অগ্নিসংযোগের রাজনীতির একটি সমুচিত জবাব। জনগণ ধ্বংস চায় না, তারা শান্তি চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সেবা খাতে সকল প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খাতের উন্নয়নে সরকার এ পর্যন্ত ২শ’ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
তিনি বলেন, যেখানে তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে সেসব এলাকায় ৯টি আধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১০টি বিশেষায়িত অগ্নিনির্বাপন ও উদ্ধারকারী ইউনিট গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, অগ্নিনির্বাপন কর্মীদের জন্য ওয়ারলেস ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। একটি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণ একাডেমী নির্মাণ করা ছাড়াও ঢাকা মহানগরীতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ভবন ও ১৪টি ফায়ার স্টেশন পুনঃনির্মাণ ও রেট্রফেটিং করা হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ সার্ভিসের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের শিকার আরজু মণির নামে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির স্ত্রী আরজু সেদিন গর্ভবতী অবস্থায়ও হত্যাকারীদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাজনৈতিক দল কিভাবে জনগণের সঙ্গে বিমাতার মতো আচরণ করতে পারে। বিএনপি কোন কল্যাণমূলক কাজ করেনি। তারা লুটপাট, হত্যাকা- ও দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে শিশু ও মায়ের মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা আমাদের সরকারের অঙ্গীকার। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাস্থ্যখাতে গত ৬ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার সকল মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এখন সরকার পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, দরিদ্র মায়েদের সহায়তা করার লক্ষ্যে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প এবং শিশুকে বুকের দুধ প্রদানকারী মায়ের জন্য ভাতা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির অধীনে আনা হয়েছে। অন্যদিকে অটিস্টিক শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সময়োপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সকল হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নত করা হয়েছে। গত ৬ বছরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৮ হাজার নতুন বেড দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) শিক্ষার উৎকর্ষের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। চক্ষু বিজ্ঞান, নিউরো মেডিসিন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, হার্ট ও কিডনি রোগ এবং সাধারণ চিকিৎসার বিষয়ে পড়াশুনা ও গবেষণার লক্ষ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে।