ছিটমহলের অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

388

Published on মে 11, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী সোমবার ৬ জেলার সমন্বয় কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তি পাসের পর আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এই চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছিটমহলের মানুষ যেন কোনো সমস্যার মুখে না পড়ে এবং কেউ যেন তাদের আতঙ্কগ্রস্ত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। ছিটমহলগুলোর মানুষের সংস্পর্শে থাকতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা, বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ছিটমহলের মানুষ খুবই দুর্ভোগের মাঝে দিনাতিপাত করছে। বিগত ৬৮ বছর থেকে তারা দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

তিনি বলেন, ছিটমহলগুলোর সার্বিক উন্নয়ন ও এর অধিবাসীদের কল্যাণে ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানকার গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পাশাপাশি হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত চুক্তি ছিটমহলবাসীদের জন্য আমাদের দায়িত্ব বৃদ্ধি করেছে। এ দায়িত্ব আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে এই চুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকের পর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন। তিনি পঞ্চগড় ও টাঙ্গাইল জেলা উন্নয়ন সমন্বয়ন কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ এবং ঢাকা ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারগণ এ কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক কর্মকান্ড, আইন-শৃংখলা এবং স্থানীয় সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং স্থানীয় প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বর্তমান মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ে দারিদ্র্যের হার কমপক্ষে আরো ১০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী পঞ্চগড় জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটিকে বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর গুরুত্ব পাওয়ার সঙ্গে এ জেলা প্রাধান্য পাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার নেপাল ও ভুটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিতে প্রস্তুত এবং এ ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অধিক গুরুত্ব বহন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, একসময় পঞ্চগড় ছিলো অবহেলিত জেলা। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর এ জেলায় সড়ক ও রেলপথ নির্মাণসহ বহু উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।

পঞ্চগড়ে চা বাগানগুলোর তদারকি করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, তাঁর সরকার ভারতের দার্জিলিং জেলার নিকটবর্তী পঞ্চগড়ে প্রথম চা বাগান তৈরির ধারণা গ্রহণ করে। এখন এ জেলায় উৎপন্ন উন্নতমানের চা ইউরোপে রফতানি হচ্ছে এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা চা বাগান রক্ষা এবং এর মান উন্নয়নের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী টাঙ্গাইল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিকে জেলার উপজাতীয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এখানকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিকাশে অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পেশের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইল একসময় দেশের রেলওয়ের নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু সেতুর নকশা পরিবর্তন করে রেলপথের মাধ্যমে টাঙ্গাইলকে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করেছে। রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোকে সংযুক্ত করতে কম্মিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।

সরকার নদী ভাঙন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সবধরনের পদক্ষেপ নেবে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন দ্রুততর করার আহবান জানিয়ে বলেন, এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বনভূমি রক্ষা ও তাদের উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

তিনি সকল প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এ দেশে কোনো পরিবার খাদ্য ও আশ্রয়হীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত হবে।

পঞ্চগড় ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকদ্বয় তাদের জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিবরণ দেন। পরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নে নজর দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসকদের তাদের এলাকার গৃহহীন মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ৯২ দিন দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন্ত নিরপরাধ মানুষ পুড়িয়েছেন। যা মানুষের প্রতি ন্যূনতম ভালোবাসা থাকলে কোনো রাজনীতিক এমন নৃশংস ঘটনা ঘটাতে পারতেন না।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের হোতাদের এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে যে, বাংলাদেশ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের জায়গা নয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা কনফারেন্স পরিচালনা করেন।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত