628
Published on মে 9, 2015তিনি কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এ ক্ষেত্রে তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ষোড়শ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য ড. এম মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি এবং জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার হল, কৃষি অনুষদ ভবন, মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ভেটেরিনারী মেডিসিন ও এনিম্যাল সায়েন্স ভবন এবং বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তন উদ্বোধন করেন।
এ ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. এল এম এসগ্রুবার গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদ ভবন, অধ্যাপক ইয়োশিও ইয়ামাদা পাঠাগার ভবন, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হল, ইলা মিত্র হল এবং কৃষিবিদ ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা আউটডোর সেন্টারের নামফলক উন্মোচন করেন এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থপন করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালনাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার আকাংখা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করবোই ইনশাল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রী কৃষির উন্নয়নে কাজ করার জন্য তথা এটিকে লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করার জন্য টেকসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে আমাদের উন্নত প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
দেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতি গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ ও গবাদিপশুর মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে দেশের বিজ্ঞানীদের মনোযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে কোনো পদক্ষেপে তাঁর সরকার সবধরনের সহযোগিতা করবে।
শেখ হাসিনা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নতুন ও উন্নত জাতের ধান ‘বিউ-১’, যা মঙ্গাপ্রবণ এলাকায় কৃষকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ধান নামে পরিচিত, উদ্ভাবনে গূরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষকদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি-বনজ সম্পদ নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে শালবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে বন বিভাগের জমির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগকে কৃষিবান্ধব সরকার হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়ন বিবেচনা করে তাঁর সরকারের প্রথম দফায় ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করাসহ দেশের সার্বিক উন্নয়ন সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত।
তবে তিনি বলেন, একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ হেক্টর কৃষি জমি অকৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যুক্ত হয়ে কৃষি খাত বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী।
শেখ হাসিনা বলেন, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবলো করে ১৬ কোটির বেশি মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ সহজ বিষয় নয়। শুধু খাদ্য কেন অন্যান্য মৌলিক চাহিদা যেমন বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার উপকরণও কৃষি জমি থেকে আসে।
তিনি বলেন, ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার উপকরণের চাহিদা মেটাতে হলে আমাদের উন্নত প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ জন্য তিনি একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে কৃষি শিক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬-২০০৯ মেয়াদে আমরা ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির দেশকে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেকর্ড ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং বাংলাদেশ আজ খাদ্য রফতানিকারক দেশ। তিনি বলেন, দেশ প্রমাণ করেছে যে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্যেও বাংলাদেশ খাদ্য সরবরাহ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন কেবলমাত্র খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশই নয়, বরং চাল রফতানিকারক দেশ।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খাদ্যপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, তিন দফায় সারের দাম কমিয়েছি। কৃষকের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। সার, সেচ, ডিজেলসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, কৃষি গবেষণায় জোর দিয়েছি।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টারি নির্বাচনে বোনঝি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ তিন বাংলাদেশী নারীর বিজয়ী হওয়ার বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং বলেন, বৃটিশ সরকারেও এখন বাংলাদেশীরা এগিয়ে যাচ্ছে।