জনগণ সন্ত্রাসী ও খুনীদের ভোট দেবে না : গণভবনে প্রধানমন্ত্রী

425

Published on এপ্রিল 26, 2015
  • Details Image

তিনি বলেন, আমরা জনগণ কেন তাদের ভোট দেব? বিএনপি-জামায়াত বা ২০-দলীয় জোট পেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করেছে এবং বাস জ্বালিয়ে দিয়েছে। মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন সচেতন মানুষ তাদেরকে ভোট দিতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, গত তিন মাস ধরে যে ব্যক্তি লাগামহীন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তিনি কিভাবে জনগণের সমর্থন চান? এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের পরও একশ্রেণীর মিডিয়ার নিরবতার সমালোচনা করেন।

ইন্দোনেশিয়া সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নেপালের ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এর প্রভাব নিয়ে জনগণের উদ্বেগ এবং বিল্ডিং কোডের ওপরও আলোকপাত করেন।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের জবাবে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ডাহা মিথ্যা বলেছেন। মিথ্যা বলা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ের কিছু ঘটনার ছবি প্রদর্শন করে শেখ হাসিনা বলেন, মিডিয়া এসব ছবি ছাপেনি। এসব ছবিতে দেখা গেছে খালেদা জিয়ার গাড়ি একজনকে চাপা দিয়েছে এবং তার নিরাপত্তা কর্মীরা জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে।
খালেদা জিয়াকে মিথ্যার রাণী হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেশে মিথ্যা ও ভাঁওতাবাজির রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি মিথ্যার রাজনীতিতে অভ্যস্ত। ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি অমিত শাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছয় জন কংগ্রেসম্যানের ব্যাপারেও তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে দুই বছর জরুরি অবস্থার জন্য খালেদা জিয়া দায়ী। তিনি বলেন, তার শাসনামলে হাওয়া ভবনকে চাঁদা না দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারেনি। তার ছেলের দুর্নীতির কারণে অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

সড়ক খাতে বিএনপির দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক চারলেন প্রকল্প থেকে আর্থিক সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাদের অবৈধ জনশক্তি রফতানির মূল্যও বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। তিনি আন্দোলনের নামে ৯২ দিনের হত্যা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনা করেছেন।

তিনি বলেন, এই ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া জয়লাভের স্বপ্নে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ‘খালেদা জিয়া, যার নিজেরই ভোট জালিয়াতির রেকর্ড রয়েছে। তিনি এখন নিজেই এখন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি খালেদা জিয়া নিজে ভালোই বোঝেন। যেহেতু তিনি নিজেই ভোট কারচুপি করে জয়ী হয়েছেন, সেহেতু এ ব্যাপারে তার চেয়ে পারঙ্গম কেউ নেই।’

খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি (জিয়া) ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের ব্যবস্থা করেছিলেন, যেখানে কার্যত ভোটারদের কোনো অংশগ্রহণ ছিলো না। ওই একতরফা নির্বাচনে জয়ী হয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া কারচুপি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের রাজনীতি ছাড়া জনগণকে কিছ্ইু দিতে পারেননি। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া জাতিকে সবচেয়ে সবচেয়ে বিতর্কিত মাগুরা ও মিরপুরের উপ-নির্বাচন উপহার দেন।

২০০১ সালে তিনি ঢাকা মহানগরীতে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন উপহার দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কেনো ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা ভুলে যাচ্ছেন, যেখানে সারা বাংলাদেশে ২ থেকে ৩ শতাংশ ভোট পড়েছিলো।’ কিন্তু খালেদা জিয়া নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করে শপথগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত ৯২ দিনের আন্দোলনে ১১৭ জন নিরপরাধ মানুষ খুন হন, ৫০৮ জন অগ্নিদগ্ধ হন, বিভিন্নভাবে ৬৬৯ জন গুরুতর আহত হন, ১,৭৬৫টি যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়, ১,১৩৮টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাশাপাশি ১৮টি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

একই সময়ে ৮টি লঞ্চে হামলা করা হয, ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ধ্বংস করা হয়, ৬টি ভূমি অফিসে আগুন দেয়া হয়, পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ অফিসেও আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়াও আওয়ামী-যুবলীগের ৪৫ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমপক্ষে ২০ আওয়ামী নেতা-কর্মীর বাড়ীঘরে আগুন দেয়া হয় । এমনকি সংখ্যালঘুদেরও রেহাই দেয়া হয়নি। বিএনপি-জামায়াতের ৬ শতাধিক কর্মীকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৩৬৩ জন বিএনপি’র এবং ২০৫ জন জামায়াত-শিবিরের নেতা।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের এমন এক সময় হত্যা করা হয়, যখন তারা যে দলের অনুসারী সে দলটি ক্ষমতায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেখেছি, যারা মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং নিরপরাধ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে গণমাধ্যমে তাদের বিষয়টি এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখা যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং শুরু করেছিলেন কিন্তু তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে যাননি অথবা আহতাদের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেননি। এমনকি খালেদা জিয়া অসহায় পরিবারের সদস্যদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেননি।

বিশ্ব ইজতেমা ও ঈদে মিলাদুন্নবীর সময় হরতাল আহ্বান করায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ১৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন নিয়েও ছিনিমিনি খেলেছে। এমনকি ব্রিটিশ সরকার অব্যাহত হরতালের কারণে বাংলাদেশ থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র প্রত্যাহার করে নেয়ারও চেষ্টা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসল কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ, এদেশের স্বাধীনতা এবং বাংলা ভাষার প্রতি খালেদা জিয়ার কোনো বিশ্বাস নেই। আর সেজন্যই তিনি অমর একুশে এবং স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, মিডিয়া খালেদা জিয়াকে ব্যাপক প্রচার দিতে পারে। কিন্তু জনগণ তাকে পেট্রোলবোমা হামলা করে মানুষ হত্যাকারী হিসাবে জানে। তার বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছে শিক্ষক, শিশু-কিশোর ও পরীক্ষার্থী। চোখ হারিয়েছে পরীক্ষার্থী ছাত্রী। তারা কখনো বিএনপি নেত্রীর ডাকে সাড়া দেবে না।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বিবৃতিকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে তিনি বলেছেন এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে তিনি (খালেদা জিয়া) সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তিনি এখন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয় পরাজয় উভয়ই নির্বাচনের অংশ। জনগণ যদি আমাদেরকে ভোট দেন, আমরা জয়ী হবো। ভোট না দিলে আমরা পরাজিত হবো। এটার সাথে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

দেশে যে কোন ধরনের বড় আকারের ভূমিকম্পের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিল্ডিং কোড প্রণয়নসহ এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্মাণকারী, প্রকৌশলী এবং জনগণসহ সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত