366
Published on এপ্রিল 19, 2015তিনি বলেন, গত তিন মাস ধরে বিএনপি নেত্রী পেট্রোল বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে জনগণকে হত্যা করেছেন এবং বাস পুড়িয়েছেন। সে একই হাত দিয়ে তিনি এখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট চাচ্ছেন। তিনি কিভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীর ‘বাস’ প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন ? তথাকথিত আন্দোলনের সময় তিনি বাস পুড়িয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আবদুল আউয়াল মিন্টুর দেয়া অধিকাংশ অর্থই জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা ও বাস পোড়ানোতে ব্যবহার হয়েছে। অথচ খালেদা জিয়া এখন এই ‘বাস’ প্রতীকের পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগ সংগঠনের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের সভাপতি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও বক্তৃতা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি আলহাজ মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা।
এতে কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি কৃষিবিদ মির্জা আব্দুল জলিল, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট খান আলতাফ হোসেন ভুলু, সহ-সভাপতি ছবি বিশ্বাস এমপি, শরীফ আশরাফ, আলহাজ শেখ জাহাঙ্গীর আলম, আকবর আলী চৌধুরী, আব্দুল লতিফ তারিন, এডভোকেট শাহ আশরাফুল হক জর্জ, এ টি এম আজিজুর রহমান বুলবুল, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম এমপি ও রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিলুর রহমান সোহাগ এবং কৃষিবিদ শওকত হোসেন সুইটও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হোসেন সুইট সংগঠনের প্রকাশনা ‘কৃষকের কন্ঠ’ এর একটি কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল তাঁর রেলখাতের উন্নয়ন কর্মকান্ড উদ্বোধনের খবরের পরিবর্তে বিএনপি নেত্রীর নির্বাচনী প্রচারকে বেশি কাভারেজ দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, জনগণ এবং বাস পোড়ানো হলেও মিডিয়া হেডলাইন করতো।
তিনি প্রশ্ন করেন, উন্নয়ন কর্মকান্ড যথাযথ প্রচার পায় না এবং গণমাধ্যমের কাছে উন্নয়ন কর্মকান্ডের কোনো মূল্য নেই। কেন এ ধরনের সংকীর্ণমনতা ?
শেখ হাসিনা বলেন, যারা জনগণকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, জনগণ তাদেরকে ঘৃণা করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্বর কর্মকান্ডের কারণে গত তিন মাস জনগণ তাদের দোকান খুলতে এবং ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি নেত্রীকে গতকাল গুলশানে একজন দোকানদারের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে। দোকানদারকেও হাসতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ কিভাবে ভুলতে পারে গত তিন মাসে তাদের ব্যবসা করতে না পারার এবং অপূরণীয় ক্ষতির কথা। আমি বুঝতে পারিনা আমরা কেন জনগণের জন্য রাজনীতি করছি।
তিনি বলেন, যারা জনগণকে হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে, সম্পদ ধ্বংস করেছে, বাস ও ট্রাক জ্বালিয়ে দিয়েছে, তারা জনগণের কাছ থেকে করতালি পাচ্ছে। আমরা অদ্ভূত এক দেশে বাস করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না এবং তিনি ৯২ দিন গুলশানের কার্যালয়ে নিজেকে বন্দী করে রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়া বাড়ী ফিরে গেছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ১৫০ জনের বেশী লোককে হত্যা করেছেন এবং তাদের হাত থেকে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুরাও রেহাই পায়নি।
তিনি বলেন, তারা সব জায়গায় আগুন দিয়েছে। বাস, লঞ্চ, রেল, চালবাহী ট্রাক, গরুবাহী ট্রাক, মুরগি বহনকারী গাড়ী সবকিছুতেই আগুন দিয়েছে এবং কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরের পেটে লাথি মেরেছে।
বিগত তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের নির্দয় সহিংসতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি। তারা কেবল ধ্বংসের রাজীতি জানে। এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু বিএনপি দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে গেছে। আমরা চাই যে, দেশ মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অন্যদিকে তারা চায়, বাংলাদেশ অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হোক।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতের কল্যাণের লক্ষ্যে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং যে কোনো সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতির জন্য খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ফলে দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়Ñ বরং দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও চাল রফতানি করছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সরকার কৃষি খাতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও বহুমুখী পদ্ধতি চালু করেছে এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করেছে।
পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচন এবং যুগোপযোগী প্রযুক্তি আবিষ্কার, বিভিন্ন জাতের শস্য বিশেষ করে লবণাক্ততা, খরা ও বন্যা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের সাফল্য কৃষি খাতে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষি খাতে ভর্তুকি দিতে অনাগ্রহী। তাদের মতভিন্নতা অগ্রাহ্য করে সরকার জাতীয় দায়িত্ব বিবেচনায় নিয়ে কৃষি খাতে বিপুল ভর্তুকি ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ৬ বছরে কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য ২৫ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের অতিরিক্ত কৃষি উন্নয়ন খাতে সরকার ৪৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ সহায়তা লাভের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দিয়ে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দেন, প্রয়োজনে আরো কার্ড দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি সহায়তা কেবল চাল নয়, বরং শাক-সবজি, ফল, দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের উৎপাদনও বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি সহায়তার ফলে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮৩.৪৩ লাখ মেট্রিক টনের দাঁড়িয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা ছিলো ৩৩৩ লাখ মেট্রিক টন। আমরা এখন মোটা চাল রফতানি করতে শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা জনগণের বিশেষ করে কৃষকদের কল্যাণে কাজ করার জন্য এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য কৃষক লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়