493
Published on এপ্রিল 8, 2015সূত্র জানায়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) নির্ধারণের সময় যেসব বিশ্বনেতা অংশ নিয়েছিলেন তাদের প্রায় সকলেই এখন আর রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে নেই। এক্ষেত্রে অন্যতম ব্যতিক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই এমন একজন যিনি ২০০০ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। আর সে বছরই জাতিসংঘে বিশ্ব নেতাদের সম্মিলনে গৃহীত হয় ১৫ বছরব্যাপী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা।
২০১৫ সাল পরবর্তী সময়ের জন্য এবার গৃহীত হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি)। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত হবে সেই লক্ষ্যমাত্রা। ঠিক এমন সময় শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর সে কারণেই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
সূত্র জানায়, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের অন্যতম অগ্রসর দেশ। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ফেলে। আর সে কারণে এই সময়ে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হয় এই ব্যাপক উন্নয়ন। এ কারণে জাতিসংঘ মহাসচিব এসডিজি হাতে নেয়ার ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনার কাছেই সব রকমের সহযোগিতা চেয়েছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা আরও জোরালো হবে। এবার ২০১৫ সালে জাতিসংঘ সম্মেলনে এমডিজির সমাপনী হবে। অন্যদিকে ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্য বা উন্নয়ন লক্ষ্য নিয়ে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারকার সম্মেলনে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। কারণ তিনি একমাত্র নির্বাহী প্রধান যিনি এমডিজি প্রণয়নে সামিল ছিলেন এবং এসডিজি প্রণয়নেও সামিল হবেন। এর সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো জাতিসংঘ তথা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইবেন কী ভাবে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এমডিজি (২০০০-২০১৫) বাস্তবায়নে সবচেয়ে ওপরের কাতারে থেকেছে।
শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসডিজি (২০১৫-২০৩০) বাস্তবায়নে কী কৌশল অবলম্বন করবেন তা জানতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিশ্ব নেতারা। শেখ হাসিনার কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বান কি মুন।
সূত্র জানায়, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতা, নারী উন্নয়ন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, টেকসই পরিবেশ, এইচআইভি এইডস ও সংক্রামক ব্যাধি এবং বিশ্ব সহযোগিতা এ আট ক্ষেত্রে বিশেষ কতগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৫ সাল। বাংলাদেশ এর প্রায় সবগুলো বাস্তবায়নে বিশ্বের কাছে এখন উদাহরণ হয়ে আছে। সামাজিক সূচকেও পার্শ্ববর্তী প্রায় সব দেশের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। যতই দিন এগিয়ে আসছে, পরবর্তী লক্ষ্য কী হবে তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা বাড়ছে। এবার ১৭ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে অনেক আগেই। এমডিজিতে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে এসডিজিতেও তার চেয়েও বেশি সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৫ সালে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক কতগুলো সভা হয়েছে সেখান থেকে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি। নবেম্বরে প্যারিসে এ নিয়ে যে সভা হবে সেখানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব জায়গায় এলডিসির চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেবে।
বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের মোট প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন পড়বে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা একেবারই নগণ্য, তাই এটি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থ তাদেরই যোগান দিতে হবে যারা এ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এসডিজিতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আসা উচিত বলে মনে করে বাংলাদেশ। আর এক্ষেত্রেও বিশ্ব ফোরামে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিশ্বের বড় বড় দেশের নেতারাও শেখ হাসিনার এই বলিষ্ঠ অবস্থানের প্রশংসা করেন এবং তারা এক্ষেত্রে তাঁকেই অগ্রভাগের নেতা মনে করেন।
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক