585
Published on এপ্রিল 8, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ আছেন তাদের সামান্য একটু অসুখ হলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। এ ব্যাপারে আমার তীব্র অনীহা আছে। কেন আমরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবো। আর কেন এ দেশে আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল গড়ে উঠবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, একথা মনে রেখে তাঁর ১৯৯৬-২০০১ সালের প্রথম সরকারের মেয়াদে বেসরকারি খাতে দেশে যাতে আরো হাসপাতাল নির্মিত হয়, এজন্য হাসপাতালে যন্ত্রপাতির উপর কর হ্রাস এবং শিশুদের চিকিৎসার সরঞ্জাম কর মুক্ত করা হয়েছিল।
তিনি বুধবার এখানে কাশিমপুর তেতুইবাড়িতে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনীকালে একথা বলেন।
কলেজটি ২০১৩ সালে ৬ একর জমির উপর ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগে (পিপিপি) নির্মিত শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিশেষায়িত হাসপাতাল চত্বরে নির্মিত হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও মালয়েশিয়ার সেবা সংস্থা কামপুলান পেরুতান জহর (কেপিজে) যৌথভাবে বিশেষায়িত এ হাসপাতাল নির্মাণ করে।
এই হাসপাতাল বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা যখন তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিবেন তখন তিনি এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার চিকিৎসকরা যখন চিকিৎসার জন্য আমাকে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দিবেন, তখন আমি চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে আসব। আমি চাই যে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল একটি আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল হিসেবে গড়ে উঠবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, প্রোজেক্ট কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, জযেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, কেপিজে হেলথ কেয়ার বারহ্যাড’র সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজি আমির উদ্দিন আবদুল সাত্তার এবং কলেজটির প্রথম ব্যাচের ছাত্রী সাদিয়া ফারহানা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কলেজের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস’র সদস্য নাজমুল হাসান পাপন এমপি।
প্রধানমন্ত্রী নার্সিং পেশাকে সেরা পেশা হিসেবে উল্লেখ করে নার্সিংয়ের উপর উচ্চতর বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণে এবং আর্তমানবতার সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি নার্সিং পেশাকে সর্বাধিক সম্মান করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন রোগী একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা পান। তবে সেই রোগী একজন নার্সের হাতের নরম ছোঁয়ায় দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।
তিনি বলেন, একজন নার্স রোগীর মনে প্রশান্তি এনে দেয় এবং তাকে উৎসাহিত করেন। এসব বিবেচনায় আমার কাছে মনে হয়েছে নার্সিং পেশাই সমাজে সবচেয়ে ভাল পেশা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় দেশে নার্সিং পেশা খুবই অবহেলিত ছিল। নার্সদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর ভাবা হতো। অথচ কেবলমাত্র বিজ্ঞান শাখার ছাত্র-ছাত্রীরাই এই পেশা গ্রহণ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর নার্সিং শিক্ষায় কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং তাদের জন্য গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স ও পিএইচডি’র মতো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি এবং বেসরকারি খাতে নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করেছি। এছাড়া তাদের জন্য দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছয় বছরে আমরা অনেক ডাক্তার ও নার্সদের নিয়োগি দিয়েছে। আরও ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষিত ও দক্ষ নার্স সৃষ্টি করার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা দেশে এবং বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাবে।
শেখ হাসিনা এ সময়ে তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের বিশেষ অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীসহ সমাজের অসহায় ও দুস্থ মহিলাদের সেবা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমার মা দেশের সকল সংগ্রাম ও আন্দোলনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে পাশে থেকে উৎসাহ যুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অসহায় দুস্থ মানুষের সেবায় তাঁর মার অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মহিয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে একটি হাসপাতাল কাম ইনস্টিটিউট করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী যোগ দেয়ায় তাকে তার আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, দেশের দরিদ্র জনগণের কল্যাণের জন্য ১৯৯৪ সালে এই ট্রাস্টটি গঠন করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বরেন, তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা ধানমন্ডি ৩২ নং সড়কের বাড়িটি এবং তাদের পৈতৃক সূত্রের অন্যান্য সকল সম্পত্তি ট্রাস্টে দান করেছেন। এই ট্রাস্টের তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ দরিদ্র লোকদের চিকিৎসা ব্যয় এবং ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এই তহবিল থেকে দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং ইনস্টিটিউটের কর্মকা-ের দিকে খেয়াল রাখার জন্য স্থানীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণে এই হাসপাতালটি ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা এটিকে একটি মেডিকেল কলেজে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তিনি বলেন, সাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে হাসপাতালের কাছে একটি আন্ডার পাস নির্মাণ করা হবে।
শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সেবা করা এবং স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে। আমাদের সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের এই ধারণা কোন দেশ থেকে আনা হয়নি। আমি আমার পিতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি সব সময়ে আমাকে পল্লীর এবং দরিদ্র লোকদের সম্পর্কে সব সময়ে আমাকে ধারণা দিতেন। সেই ধারণা থেকে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করার উদ্যোগ নিয়েছি।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল