যাত্রীদের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনে বিমানের সেবার মান বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

523

Published on এপ্রিল 5, 2015
  • Details Image

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বিমানকে আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখতে চাই। এটা অর্জন করতে হলে জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজকে সেবার মান বৃদ্ধি ও ভাবমূর্তি রক্ষার মাধ্যমে যাত্রীদের আরও বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমি বিমান কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব বিশেষ নজর দিতে, যাতে এর সেবা ও পরিচালনার মান আন্তর্জাতিক মানের, সময়োপযোগী এবং আরও আধুনিক হয়।’

আজ বিকেলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা এবং নতুন কেনা দুইটি ‘ড্যাশ৮ কিউ৪০০’ উড়োজাহাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানকে যাতে আরও লাভজনক করা যায় সেলক্ষ্যে জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজকে সময়োপযোগী ও সেবাধর্মী করার জন্য কার্গো ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, আর আমরা কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান নির্মাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য খাদ্যসামগ্রী রফতানির জন্য কার্গো ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহন করে কোন বিমান সংস্থাই লাভজনক হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমরা চাই, এ লক্ষ্যে মনোযোগ সহকারে আপনারা যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।’

প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সৈয়দপুর এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হবে।

অনুষ্ঠানে আর বক্তব্য রাখেন- বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামালউদ্দিন আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেউড।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বহরে ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ মডেলের দু’টি এয়ারক্রাফ্ট সংযোজনের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। জনগণকে দেওয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি পুরণ হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর এবং কক্সবাজারে বিমানের ফ্লাইট চলাচল জনগণের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে’।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সংস্থা ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স’ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা হিসেবে ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স’- এর জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বিমানের প্রতি এতই আন্তরিক ছিলেন যে, এর লোগো তৈরি এবং চূড়ান্ত করার কাজ তিনি নিজে তদারকি করেন”।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ অভ্যন্তরীণ রুটে সিলেট ও চট্টগ্রামে ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে বিমানের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে অবশ্য ৪ মার্চ একটি ভাড়া করা বিমানের মাধ্যমে ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন দেশ থেকে উড়োজাহাজ সংগ্রহ করেন। তিনি ব্যাংকক, কলকাতা, কাঠমণ্ডু ও দুবাই আন্তর্জাতিক রুট চালু করেন। বিমানের জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বিমানের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল এভিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা জাতির পিতার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেই। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে দুটি ডিসি-১০ বিমান বহরে যুক্ত করি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ফ্লাইটের তিনটি এফ-২৮ এয়ারক্রাফ্ট সংগ্রহ করি। এছাড়া বেশ কয়েকটি এয়ারক্রাফ্ট ভাড়া করে বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা এবং গন্তব্যস্থলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। আমরা সৌদি আরবের দাম্মামে ফ্লাইট চালু করি’।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। একে একে বন্ধ হতে থাকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটসমূহ। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়ে। জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে তারা পরিণত করে লুটপাট আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা বিএনপি-জামাত জোটের ধ্বংসস্তুপ থেকে তুলে বিমানে আবার নতুন গতির সঞ্চার করি। বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেই। ঢাকা-দিল্লি, ঢাকা-ইয়াঙ্গুন ও ঢাকা-হংকং রুটে আবার ফ্লাইট চালু করি’।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক করে রেখেছিল। আমরা সরকারে এসে বিমানবন্দরগুলোর মান বৃদ্ধি করি। নিরাপদ বিমান অবতরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বিমানকে বিশ্বের উন্নত বিমান সংস্থাগুলোর সমকক্ষ করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ করা হয়েছে। ই-টিকেটিং চালু, অনলাইন বুকিং, যাত্রীদের আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকেট ক্রয়ের সুবিধা প্রবর্তন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমানবন্দরের রানওয়ের উন্নয়ন, পার্কিং ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধি এবং আপগ্রেডেশন বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনাল ও দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। যাত্রীসেবা বৃদ্ধির লক্ষে ৩২টি বোর্ডিং ব্রিজ সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বাগেরহাটে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার অদূরে আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তাবিত সর্বাধুনিক বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে। এ বছরের মধ্যে আরও ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হবে বলে আশা করছি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪টি ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ আগামী ২০১৯ ও ২০২০ সালে বোয়িং কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। বিমান বহর বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২টি ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ঈজিপ্ট এয়ার হতে লীজে সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২৩ সাল নাগাদ বহরে বিমানের সংখ্যা ৩০টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান শুধু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও। দেশের-অভ্যন্তরে ঢাকার সাথে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ শহরের সংযোগ পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে বিমান আজ যে সাফল্যের সিঁড়ি অতিক্রম করল তা ধরে রাখতে হবে। বিমানের যাত্রী সেবা বিশেষ করে- ইন ফ্লাইট সার্ভিস, লাগেজ ব্যবস্থাপনা, কার্গো সার্ভিসের উন্নতি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বিমানকে লাভজনক, যুগোপযোগী ও আরো সেবাধর্মী করার লক্ষে জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং বৃহৎ এয়ারলাইন্স এর সাথে কোড শেয়ারিং এর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহবান জানান। এ দু’টি কার্যক্রম গ্রহণে বিমানকে সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা লন্ডন, কুয়ালালামপুর, জেদ্দা, দাম্মাম, রিয়াদ এবং ব্যাংককে ফ্লাইট শিডিউল বৃদ্ধি করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। পর্যটন বর্ষে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০ লক্ষ পর্যটক বাংলাদেশে আগমন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা বাংলাদেশ বিমান এ সকল পর্যটক পরিবহন কাজে সর্বোচ্চ সেবা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখবে। দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে’।

তিনি বলেন, সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস কাজ করছে। তাই জনগণের প্রতিষ্ঠান বিমানের উন্নয়নে যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুই আমরা করব। অভ্যন্তরীণ রুট চালু হলে এর সেবা পাবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। বিমান বহরের উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, মুনাফা অর্জন, সেবার মানোন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিমানকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে হবে।

পরে প্রধানমন্ত্রী কেক ও ফিতা কেটে ‘মেঘদূত’ ও ‘ময়ুরপঙ্খী’ নামে বিমান দুইটির শুভ উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, বিমান দুইটির নামকরন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কনে।

তিনি বিমানের অভ্যন্তরীন ফ্লাইট পরিচালনারও শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত