575
Published on মার্চ 15, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ যখন সব খাতে বিপুলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে সময়ে জ্বালাও-পোড়াও, বর্বরতা ও মানুষ হত্যার কারণে আমরা কিছু সমস্যার মোকাবিলা করছি। আশা করি এসব সমস্যা থাকবে না। আমরা এ পরিস্থিতি উত্তরণে সক্ষম হবো।’
তিনি আজ সকালে আগারগাঁওয়ে আইসিটি বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে তাঁর সূচনা ভাষণে একথা বলেন।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। এছাড়া এতে বক্তৃতা করেন একই বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর হরতাল-অবরোধের কার্যকারিতা নেই। এ কারণে হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষ খুন করা হচ্ছে। আমি জানি না, কেন এ নৃশংস কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দলের বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতার জন্য এ দলের অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে। আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এজন্য যে আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা কাজ করবো, অন্য কোন দল সেভাবে কাজ করবে না। এটাই বাস্তবতা। দেশের জনগণ ইতোমধ্যে তা বুঝে গেছেন।
বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ’ দ্রুত উৎক্ষেপণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপগ্রহ শিগগিরই চালুর কাজ আমাদের শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ’ এই মেগা প্রকল্পের কাজ আন্তর্জাতিক টেন্ডার অথবা গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) পর্যায়ে বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। জিটুজি পর্যায়ে হলে সময়ের সাশ্রয় হবে। এক্ষেত্রে কিছু সদস্য দেশের সক্ষমতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্নের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ প্রকল্পের কাজ অনেক বিলম্বিত হচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব এটি শেষ করতে হবে।
তবে তিনি যশোরে বহুতল সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেক বিভাগ ও জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করতেন। এ লক্ষ্যে তিনি স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে। একই বছর তিনি বিসিএসআইআর প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু দেশে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়নে ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন বিশ্ব পরিমন্ডলে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে থাকে ঠিক তখনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন। মানুষের মৌলিক অধিকার সামরিক জান্তার বুটের তলায় পিষ্ট হয়। দেশে সূচিত হয় গণতন্ত্রহীনতার এক অধ্যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে প্রতিটি খাতের পাশাপাশি ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতকেও ঢেলে সাজায়। মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙ্গে দেয়ায় ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়।
তিনি বলেন, ‘জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা ২০০৯ সালে আবারও সরকার গঠন করি। তখনও চারিদিকে ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রেখে যাওয়া অচলাবস্থা। এ অচল অবস্থা কাটিয়ে তুলতে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের আমলে গঠিত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। দেশের তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে একত্রিত করে একক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশ আইটিইউ কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের জন্য টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি খাতে জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সফল ব্যবহারের অবদান স্বরূপ বাংলাদেশ ১৯১১ সালে মর্যাদাপূর্ণ সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৪ সালে সাউথ সাউথ কো-অপারেশন এ্যাওয়ার্ড লাভ করে। একই বছর (২০১৪) তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা প্রদানে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে আইটিইউ বাংলাদেশকে ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডাব্লিউএসআইএস) পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়া বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলোজি এন্ড সার্ভিসেস এলায়েন্স মেক্সিকো থেকে ডাব্লিউটিটিএসএ ২০১৪ এক্সসেলেন্স এ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
তিনি বলেন, গত ছয় বছরে সরকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। দেশে মোট ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি অপারেট করছে এবং ১২ কোটি ৩ লাখ সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। মোবাইল ফোনের কলচার্জ মিনিটে ৫০ পয়সারও কমে নেমে এসেছে- যা ২০০১ সালে ছিল প্রতি মিনিট ১০ টাকা। সরকারি-বেসরকারি ৫টি মোবাইল অপারেটারকে ৩জি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং অচিরেই ৪জি চালু হবে। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দেশে টেলিডেনসিটি হচ্ছে ৭৮.১২ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ২৭.৪২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কোন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
তাঁর সরকার ২৫ হাজার ওয়েভ সাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েভ পোর্টাল জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালু করেছে একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিস্ময়কর সাফল্যের জন্য তিনি মন্ত্রণালয়টি ও এর অধিন্যাস্ত সংস্থার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্কাইপি’র মাধ্যমে গোপালগঞ্জের ৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ল্যাব উদ্বোধন করেন।
তিনি এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন চালু করেন। এ মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন কমিশন, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন, বিকেএসপি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের এনবিআর, ইআরডি ও রূপালী ব্যাংক, বারি’র রাইস নলেজ ব্যাংক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের রেশম গুটি চাষ তথ্য, কৃষি তথ্য সার্ভিস, যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদফতর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পিআইডি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তুলা উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোবাইল হেলথ সার্ভিস, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনফোকোশ টিউব অব এটুআই।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল