গণতন্ত্রের প্রতি যে কোন হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে সেনাবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

435

Published on মার্চ 1, 2015
  • Details Image

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থানের ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যাতে কোন উপায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে দেশ থেকে অশুভ শক্তিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।’

আজ এখানে রামু ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ম পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলনকালে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা আশা করেন যে, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সুরক্ষা প্রদানে এবং এই এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় ডিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি তাঁর দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন যে, সেনাবাহিনীর অন্যান্য পরিচালনা কার্যক্রম, প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুসরণ করে ১০ পদাতিক ডিভিশন একটি আদর্শ বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অতীতে জনগণকে সেবা প্রদানে তাঁর সরকারকে সর্বদা তাদের সমর্থন দিয়েছে। ‘ভবিষ্যতেও জনগণের প্রয়োজনে তারা জনগণের পাশে দাঁড়াবে।’

মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ এবং সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ডিভিশনের অধীন নবগঠিত আর্টলারি, ও ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড এবং রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১০ম আর্টলারি ব্রিগেড, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ৯৭ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড, এইচএম এরশাদ ২৩ রেজিমেন্ট আর্টলারি, জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া ৬০ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ ৬৬ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করেন।

প্রধানমন্ত্রী রামু ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া এবং ১০ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

শেখ হাসিনা ১০ম পদাতিক ডিভিশনের অধীন নবগঠিত ১০ম আর্টিলারি ব্রিগেড, ৯৭ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড, ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টলারি, ৬০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ৩৬ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের উদ্বোধন করেন।

এ উপলক্ষে আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।


প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এই ডিভিশনের সদস্যগণ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।

তিনি বলেন, সমুদ্র, পাহাড় ও সবুজে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের রামুতে আজ ১০ পদাতিক ডিভিশনের সদর দফতর এবং এর অধীন ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহ প্রতিষ্ঠিত হলো।

শেখ হাসিনা বলেন ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর বাংলাদেশ সেবাবাহিনীর সদস্যগণ এই রামুতে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার ও ভাবনা কেন্দ্র পুনঃনির্মাণ করেছে। যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্যে সরকার প্রধান হিসেবে আমি আমার সাধ্যমত সকল সহযোগিতা প্রদান করছি। একটি আধুনিক ও দক্ষ সেনাবাহিনীর জন্য আগামীতেও যা যা প্রয়োজন তা করতে আমি আমার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি তারাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য জাতি গঠনমূলক কাজে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন।

শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘ মান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা, গণতন্ত্র উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রসারসহ পুনর্গঠন কাজে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সশস্ত্র বাহনিীর সদস্যগণ ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে যাবেন। তাদের তাদের নিজস্ব প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নিজেদের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন শৃঙ্খলা ও শান্তি। কিন্তু সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের মতো কর্মকা- অনেক সময় শুধু উন্নয়ন কর্মকা-কেই বাধাগ্রস্ত করে না, দেশের অখ-তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রবর্তিত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনের জন্য তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী, কম্বাইনড আর্মস স্কুল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা গড়ে তোলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর সরকার একটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও), একটি আর্মার রেজিমেন্ট, তিনটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, দু’টি আর্টিলারি রেজিমেন্ট, একটি রিভারেইন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন, দু’টি ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং একটি সাপোর্ট এন্ড ট্রান্সপোর্ট ব্যাটালিয়ন গঠন ও স্বীকৃতি প্রদান করে।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীর আধনিকায়ন ও উন্নয়নের অংশ হিসেবে এনডিসি, বিআইপিএসওটি, এএফএমসি, এমআইএসটি ও এনসিও’স প্রতিষ্ঠা করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর্মির উন্নয়নে ও অন্যান্য কার্যক্রমে গতি সঞ্চারে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের সমাজ কল্যাণ কার্যক্রম সম্প্রসারণে ট্রাস্ট ব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থা গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ও ফোর্সেস গোল-২০৩০’র অধীনে তাঁর সরকার বিভিন্ন প্রয়োগিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিলেটে ১৭ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের পাশাপাশি একটি ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড এবং দুইটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন তদারকি ও নিরাপত্তার জন্য দুইটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।

সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গত ৬ বছরে দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ৬ বছরে দেশ ৬ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯০ মার্কিন ডলার এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এ সময়ে দারিদ্র্য হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশ এবং সরকার আগামী ৪ বছরে এই হার কমিয়ে ১৪ শতাংশতে নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, প্রায় ১২ কোটি লোক মোবাইল ফোন সুবিধা ভোগ করছে এবং ৪.৫ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তথ্য প্রবাহ উন্মুক্ত করে দিতে এবং জনগণের সামনে সরকারের আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রামীণ পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ এখন তাদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অশিক্ষা দূরীকরণে এবং একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবছরের শুরুতেই বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষিত ও কর্মসক্ষম জনশক্তি গড়ে তোলায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল দেশ নয়। আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত