411
Published on ফেব্রুয়ারি 22, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোমা প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারীদের পাশাপাশি আদেশদাতা ও অর্থের যোগানদারদের বিচার কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক প্রক্রিয়ায় হওয়া প্রয়োজন। কারণ গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, তারা আরো ভয়াবহ ঘটনা সংঘটনের পরিকল্পনা করছে।
তিনি আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
বিএনপি’র চলমান কর্মকাণ্ডকে ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের এই গোলযোগ স্পষ্টতঃ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। যদিও এই অশুভ তৎপরতা থেকে তারা কিছুই অর্জন করবে না।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বক্তৃতা করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়টির সচিব আবু সালেহ এস কে মো. জহিরুল হক, সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মাদ শহিদুল হক এবং মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের নজিরবিহীন সাফল্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সূচকে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘বিস্ময়’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্ররা দেশকে করুণার পাত্র বানাতে চায়।
তিনি বলেন, মানুষ যাতে বিচার পায়, শান্তিতে বাস করতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতার সঙ্গে এগিয়ে যায়, এ জন্য বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরামর্শ দেয়া ও একত্রে কাজ করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতে তাঁর সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করছে এবং আগামীতে এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয় ও ২০৪১’র মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা, নির্দেশনা ও দীর্ঘমেয়াদী ভিশনের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা জট ও দীর্ঘ সূত্রিতা হ্রাসে কাজ করতে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করতে আইনী ব্যবস্থা সহজ হওয়া প্রয়োজন। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন যে আইনের ফাঁক বুঝে প্রকৃত কোন অপরাধী যেন বেরিয়ে আসতে না পারে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের বিচার বিভাগের নতুন নিয়োগ ও বিদ্যমান বিচার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
অস্বচ্ছলতার কারণে মামলা করতে আদালতে আসতে পারে না, এমন মানুষের সহায়তায় উপজেলা পর্যন্ত বর্তমান লিগ্যাল এইড কমিটিকে শক্তিশালী করতে কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান তিনি।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলা ও চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার হচ্ছে সরকারে আন্তরিকতা ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা জাতিকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছে। এছাড়া অপর দু’টি মামলার গুরুতর ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি যে ব্যবস্থায় দেশের অধিকাংশ মানুষ বিচার পায় বিদ্যমান সেই বিচার ব্যবস্থাকেই অগ্রাধিকার দেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাদের বিচার দেশকে কলঙ্ক থেকে মুক্ত করবে। এই অপরাধীরা বাড়িঘর জ্বালিয়েছে, মা-বোনদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছে এবং দেশব্যাপী নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তারা দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অপরাধীদের বিচার না হওয়ায় তারা ২০১৩ ও ২০১৪ এবং বর্তমানে একই ধরনের অপরাধ সংঘটনের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতার পর অনেক কুখ্যাত অপরাধীকে আটক করেছিলেন। কিন্তু সামরিক একনায়ক দায়মুক্তি দিয়ে তাদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে।
রাষ্ট্রের বিচার, আইন ও নির্বাহী এই তিন বিভাগের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এই তিন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা ছাড়া কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিচার বিভাগ হচ্ছে মানুষের ন্যায় বিচারের শেষ আশ্রয় স্থল। বিচার বিভাগ যথাযথভাবে কাজ না করলে কোন দেশ এগুতে পারে না।
বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপগুলোর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নির্মাণে ৮৭০ কোটি ৩৭ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ প্রকল্পের আওতায় সব আদালত ভবন পুনঃসংস্কার ও বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার আইনী ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি লেজিসলেটিভ ড্রাফট উইং প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশের ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর দেশ দীর্ঘদিন অরাজক অবস্থায় ছিল। সামরিক একনায়করা সংবিধান স্থগিত রেখে শাসন করে।
জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুজ্জীবিত হয় এবং এখন মানুষ সাংবিধানিক শাসন ও গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করছে।
বাংলাদেশের মানুষ আজ সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো উন্নত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে ওইসব দেশের আগে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল