গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসতে বিএনপির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

461

Published on ফেব্রুয়ারি 8, 2015
  • Details Image

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল এবং তারা আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। কিন্তু তারা বাস ও ট্রাক চালক, শিশু এবং নিরপরাধ জনগনের আগুনে পোড়া দেহের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারে না। তাদেরকে অবশ্যই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আজ সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনার উদ্দেশে নির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে তাঁর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আজ এই মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন।

খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে রাজনৈতিক ভুল করেছেন বলে শেখ হাসিনা পুনরুল্লেখ করেন। ‘দেশবাসী কেন তাঁর ভুল সিদ্ধান্তের জন্য মূল্য দিবে’ এই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন খালেদা জিয়াকে সুমতি দেন যাতে তিনি ধ্বংসাত্মক নীতি থেকে সরে আসেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী এম মতিউর রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হাসান।এ সময় মন্ত্রনালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চলছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন,একই সময়ে তাদের লক্ষ্য জনগণের ভোগান্তি বৃদ্ধি করা।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি নেত্রী হয়তো উন্মাদ বা মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন, তা নাহলে কিভাবে তিনি দিনের পর দিন নিজের বাসা ছেড়ে কার্যালয়ে অবস্থান করেন।এটা ঠিক স্পষ্ট নয় যে, তিনি কি ধরনের বিপ্লবের সূচনা প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এটা সত্য যে, তিনি নরহত্যা করছেন এবং এমনকি শিশুদেরকেও জীবন্ত পুড়িয়ে মারছেন।

‘কিছু মানুষ হত্যা, আরও অনেককে বিকলাঙ্গ, যানবাহন পোড়ানো এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ব্যতীত এ ধরনের আন্দোলন থেকে বিএনপির অর্জন কি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি বিএনপি মনে করে এই ধ্বংসযজ্ঞ তাদের অর্জন, তাহলে জাতির জন্য তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধুমাত্র শুক্র ও শনিবারে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কারণ ছেলেমেয়েরা ঝুঁকির মধ্যে পরীক্ষার হলে যেতে পারে না। তাই নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচি প্রস্তুত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি- জামায়াত সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও হরতাল আহবান করতে পারে।

বিএনপি ও জামায়াত ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে বিধায় তাদেরকে বিশ্বাস করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত চায়না জনগণ শিক্ষিত হোক, যদি জনগন শিক্ষিত হয় তাহলে তারা জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সেকুলারিজম মানে নাস্তিকতা নয়। সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে এটি হলো একটি রাষ্ট্রীয় নীতি। এই নীতি অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম সাংবিধানিক মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সহ অবস্থান ও সম্প্রীতি। এটিই মহানবী রাসুল (সা.)এর শিক্ষা। আওয়ামী লীগ সব সময়ই এই নীতিকে তুলে ধরছে যাতে প্রত্যেকে তাদের ধর্মীয় অধিকার ভোগ করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করছে। স্বাধীনতার পর কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুই ইসলামের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা ইসলামের জন্য কিছুই করেনি।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনে প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায় জাতীয় মসজিদের দু’টি মিনার নির্মাণ এবং আরো সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তবে বিএনপি-জামায়াত যারা নিজেদের ইসলামপন্থী দাবি করে তারা ২০০১ সাল থেকে পুরো ৫ বছর প্রকল্পটি ফেলে রাখে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক মুসলিম দেশের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করেন এবং মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ আয়োজনের জন্য তুরাগ নদীর তীরে জমি বরাদ্দ করেন।

এখন বিএনপি-জামায়াত ইজতেমার মোনাজাতে অংশগ্রহণে মুসল্লিদের বাঁধা দিচ্ছে। তারা মসজিদকে তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে, পবিত্র কোরআনের কপি পুড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে বিএনপি-জামায়াতে ধর্মের প্রতি কোন বিশ্বাস আছে কিনা সেটি নিয়েই সন্দেহ আছে।

ইসলামের উন্নয়ন এবং ইসলামিক চিন্তা আদর্শ প্রচারে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে যাতে কোমলমতি শিশুরা ধর্মীয় বিশ্বাস ও নীতি আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগের শাসনকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব বাজেটের আওতায় এনেছে এবং প্রতিটি জেলায় অফিস স্থাপন করেছে। সরকার ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছে এবং পবিত্র কোরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছে। সৌদি সরকার ও মুসলিম সম্প্রদায় বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনার সাফল্যের প্রশংসা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর অবৈধ সরকার ইসলামকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং ইসলামের শিক্ষা থেকে সরে গিয়ে অন্যান্য ধমীর্য় সম্প্রদায়ের সদস্যদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা অনৈসলামিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিল এবং এখন তারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে যেখানে সকল ধর্মের লোক তাদের ধর্মীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনে সক্ষম হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার অন্যান্য ধর্মের লোকদের কল্যাণে এবং উন্নয়নে একইভাবে মনোযোগ দিয়েছে। এ জন্য অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপনের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার জন্য ১৫০০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিবছর বরাদ্দ বেড়েছে।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত