1270
Published on ফেব্রুয়ারি 1, 2015অনুষ্ঠানে তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর এ্যামিরেটস আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রনজিৎ কুমার বিশ্বাস, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, জার্মান সাহিত্যিক হ্যান্স হার্ডার, বেলজিয়ামের সাহিত্যিক ফাদার দতিয়েন, ফরাসী লেখক অধ্যাপক ফ্রান্স ভট্টাচার্য এবং ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট গবেষক ড. পবিত্র সরকারও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সব কিছুই নিয়ম-শৃংখলার আওতায় নিয়ে এসেছিল। তিনি বলেন, আমরা বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি। যথাসময়ে পরীক্ষা আয়োজন ও ফলাফল প্রকাশ করেছি। আমরা চাই ছাত্র-ছাত্রীরা সুযোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠুক। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন হরতাল আহ্বান করে বিএনপি-জামায়াত পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও পরীক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান আন্দোলনকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকা- হিসাবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, যখনই দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়, তখনই দেশের ওপর একটি কালো মেঘের ছায়া নেমে আসে এবং চরম হামলা শুরু হয়।
তিনি বলেন, দেশে যখন একুশে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন বাতাসে বার্ন ইউনিটের পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, ছেলেহারা মায়ের, স্বামীহারা স্ত্রীর এবং সন্তানহারা বাবা-মায়ের আর্তনাদ।
তিনি আরো বলেন, আমি বুঝি না- কেন এ ধরনের জঘণ্য অপরাধ করা হচ্ছে। কেন হাউজ টিউটর, শিক্ষক, ডাক্তার, ট্রাক ও এর চালক, কন্ডাক্টর, দিনমজুর, নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য বিএনপি-জামায়াতকে মূল্য দিতে হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা যে ভুল করেছে, সে ভুল সংশোধনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তাদের সে ভুলের জন্য নিরীহ মানুষকে কেন মূল্য দিতে হবে?
শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সুতরাং এ জাতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কাছে কখনো পরাজিত হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে ছিল তারা এখনো এদেশ ও এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে তারা ৫৮২টি স্কুলে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ না নেয়া ছিল বিএনপির রাজনৈতিক ভুল। আজ যখন মানুষ ভালো ও নিরাপদ আছে তখন আবারও বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি তাদের রাজনৈতিক ভুলের দায়ভার সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সকল অপশক্তিকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ মুক্ত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন একটি গৌরবোজ্জ্বল ও বীরোচিত লড়াইয়ের নাম। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ঘটনা বিরল। আমরা এখন একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর বাংলাভাষা ও সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ষাট বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ছয় দশক পূর্তিতে আমি বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের আমলে বাংলা একাডেমিতে অবকাঠামোগত ও গবেষণামূলক কর্মকা-ে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখন একুশে বইমেলা পরিণত হয়েছে বৃহত্তর বাঙালির প্রাণের মেলায়। এ মেলায় শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সমাগমই ঘটে না, বরং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত বাঙালি কবি, লেখক, পাঠকও দেশে ছুটে আসেন এই মেলাকে কেন্দ্র।
শেখ হাসিনা বলেন, এই মেলার পরিসর বৃদ্ধির যে দাবি ছিল তা বাস্তবায়নে আমরা গত বছর থেকে বাংলা একাডেমির সামনে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছি। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানকে ঘিরে গোটা এলাকাকে বাঙালি সংস্কৃতির বলয় হিসাবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেয়ার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিকীকরণের বীজ বপন করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে কানাডা প্রবাসী প্রয়াত রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালাম প্রমুখ বাঙালির প্রাথমিক উদ্যোগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সক্রীয় প্রচেষ্টাতেই একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এভাবেই বাংলার একুশে পরিণত হয় বিশ্বের একুশে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এই বাংলা একাডেমিতেই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উদ্বোধন করেছিলেন।
তিনি বলেন, চার দশক পর আরো বৃহত্তর পরিসরে বাংলা একাডেমি ‘এই সময়ের সাহিত্য’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করেছে। এই সম্মেলন সমকালীন বিশ্ব সাহিত্য সম্পর্কে আমাদের ধারণা লাভের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সম্মেলন দেশ-বিদেশের লেখকদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনকে সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইডেন, মালয়েশিয়া ও ভারতসহ ১২টি দেশের ৪৮ জন কবি ও লেখক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন-২০১৫-তে অংশ নিচ্ছে।