'পানি ভবন' এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী

1950

Published on জানুয়ারি 31, 2015
  • Details Image

তিনি আশা প্রকাশ করেন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নদীসমূহ রক্ষা এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব সামলানোর পাশাপাশি বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবন থেকে জনগণকে রক্ষায় মন্ত্রণালয় আরো গতিশীল ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

আজ এখানে ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ‘পানি ভবনের’ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর এনভায়রমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)-এর প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন দু’টি নগরীর আগারগাঁও ও মিরপুর এলাকায় নির্মাণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দু’টি বিভাগ সিইজিআইএস ও আইডব্লিউএম দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এবং পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পূরণ হবে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এতে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ওয়াটার মডেলিং, কম্পিউটেশন হাইড্রোলিকস এন্ড এলাইড সায়েন্স ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সেবা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিজস্ব আয়ে পরিচালিত একটি সরকারি ট্রাস্ট। এটি সমন্বিত পরিবেশগত সমীক্ষা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম, রিমোট সেনসিং ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন ও মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

নদীগুলোতে ব্যাপক খনন কাজে তাঁর সরকারের গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীগুলোর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে প্রতিবছর নদী খনন অব্যাহত রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে, দুষণ বন্ধ করতে ও নদীতে শিল্প বজ্য নিষ্কাশন বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের নাব্যতা উন্নয়নে এবং পুংলি, ধলেশ্বরী, বংশী ও তুরাগ খননে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইডব্লিউএম দেশের ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং সেবা প্রদানে একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান দক্ষতার সঙ্গে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখছে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর গাণিতিক মডেলিং সম্পাদন এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম একটি কাজ। আইডব্লিউএম তিস্তা বাঁধ প্রকল্প, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, পদ্মা সেতু প্রকল্প, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা পার্শ্ববর্তী নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য যমুনা নদী থেকে ঢাকা পর্যন্ত নদী খননের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বাস্তবায়ন পরিবেক্ষণে কাজ করছে।

পাশাপাশি আইডব্লিউএম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে গঙ্গা নদীর গাণিতিক মডেলিং সমীক্ষা, টপোগ্রাফিক্যাল ও ফিজিক্যাল ফিচার জরিপ এবং ম্যাপিং সম্পাদনে অবদান রাখছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও আগাম বন্যা সতর্কীকরণ, ঢাকা পানি সরবরাহ মহাপরিকল্পনা, দেশের ১৪৮টি পৌরসভায় নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য উৎস অনুসন্ধান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা সমাধানে এ প্রতিষ্ঠান তাৎপর্যপূণ অবদান রাখছে।

তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে ভারত, মালয়েশিয়া, তাজিকিস্তান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, নেপাল প্রভৃতি দেশে কাজ করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

নদীগুলোকে এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের রক্তনালী হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু পানি সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বোর্ড গঠন করেন এবং দেশে পানি সম্পদ, সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বোর্ডের অধীনে ১৬৮টি প্রকল্প গ্রহণ এবং ৬৭টি প্রকল্প সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ২০০১ সাল ক্ষমতায় এসে অন্যান্য প্রকল্পগুলো বাতিল করে দিয়েছিল।

পানি সম্পদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি এবং ২০০১ সালে জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিক ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে ১৯৯৭ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে ন্যূনতম পানি প্রবাহ নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, সরকার হাওর এলাকায় ২ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০০ সালে বাংলাদেশ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০০ সালে গোড়াই নদী ড্রেজিং সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু নদীটর নাব্যতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত সরকারের অনীহার কারণে বিগত বছরগুলোতে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে, সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে।

অঞ্চলের অভিন্ন নদীগুলোর সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত এ লক্ষ্যে উন্নয়ন সংক্রান্ত সহযোগিতা বিষয়ে কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

তিনি বলেন, পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ত্রি-পক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশেষজ্ঞরা ধরলা, মনু, মুহুরি, খোয়াই ও গোমতী নদীর পানি বণ্টনের চুক্তির খসড়া প্রণয়নে কাজ করছেন।

দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার যখন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তখন বিএনপি ও তার সহযোগিরা ২০ দলীয় জোটের নামে লোকজনকে হত্যা এবং শান্তি বিনষ্ট করছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সাধারণ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশ সকল সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি নেতা ও তার সহযোগিরা বাংলাদেশের অগ্রগতি চায় না বলেই দেশের সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে।

তিনি বলেন, জনগণ আশা করছে, বিএনপি এসএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে। অন্যদিকে, তারা এই পরিস্থিতিতে আরো কঠোর কর্মসূচি হরতাল ঘোষণা করেছে যাতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে না পারে।

তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট দেশের জন্য ‘বিষাক্ত নাগপাশে’ পরিণত হয়েছে। তিনি এই অশুভ শক্তির মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত