জনগণের নিরাপত্তা বিধানে যেকোন ব্যবস্থা বিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

437

Published on জানুয়ারি 28, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেশ সৃষ্টি করেনি। এ জন্য দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের কোন দরদ নেই।

তিনি বলেন, আমরা এদেশ সৃষ্টি করেছি। দেশের জন্য আমাদের দরদ আছে এবং লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের।

প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৫ উপলক্ষে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণকালে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে মৌলিক ব্যবধান রয়েছে। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে চাই, কিন্তু এক্ষেত্রে বিএনপি দেশকে পরনির্ভরশীল করতে চায়। আমরা চাই দারিদ্র্য নির্মূল করতে- অথচ বিএনপি চায় দেশকে ভিক্ষুকে পরিণত করতে।

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তৎপরতা দমনে দৃঢ় মানসিকতার সঙ্গে কাজ করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আপনাদের কাছে আমার একমাত্র প্রত্যাশা হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিÑ যাতে আমরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে আমি আপনাদের অনুমতি দিচ্ছি যে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যাকারী ঘাতকদের বিরুদ্ধে যখন যেখানে যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা আপনারা নেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারম্যান তার সন্তান হারানোর ব্যথা বুঝতে পারছেন। কিন্তু এটা দুভার্গ্য যে তিনি এখনো তার দলের লোকদের পেট্রোল বোমা হামলায় প্রতিদিন স্বজন হারানো মানুষের বেদনা ও আর্তনাদ বুঝতে পারছেন না।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এস মোজাম্মেল হক খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শহিদুল ইসলাম ও ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান পুলিশ বিভাগের চাহিদার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে পুলিশ যে কোনো পদক্ষেপ নিলে দেশের মানুষ তা স্বাগত জানাবে।

সাধারণ জনগণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন না করার জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন।

বিএনপি’র চলমান আন্দোলনকে অর্থহীন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি’র কার্যক্রমকে কোনভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন বলা যায় না বরং এটি নিছক সন্ত্রাসী কর্মকা-।

তিনি বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে আমরা সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছিলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে বলেছিলাম, কিন্তু বিএনপি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারে যোগদানের আহবান প্রত্যাখ্যান করে এবং নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।

নির্বাচন বর্জনের নামে তারা ধ্বংসযজ্ঞের পথ অনুসরণ করে এবং নিরীহ লোকদের হত্যা করে। তিনি বলেন, গত এক বছর দেশ ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি দেখে বিএনপি-জামায়াত পাগল হয়ে গেছে এবং সরকার উৎখাতের আন্দোলনের নামে তারা বেআইনী কার্যক্রম শুরু করেছে। এ সময়ে তারা আরো ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা নিয়েছিলো। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের অশুভ পরিকল্পনা পণ্ড করে দিয়েছে।

সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে দরিদ্রহার আরো ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

তিনি বলেন, ধনী-গরীবের আয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনতে এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আমাদের সরকার সাফল্য অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত বিকাশমান ৫টি দেশের অন্যতম। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও আমরা দেশকে এই অবস্থানে নিয়ে আনতে পেরেছি। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আসল লক্ষ্য হলোÑ প্রবৃদ্ধির গতিকে বাধাগ্রস্ত করা। তবে জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা, প্রবৃদ্ধির গতিকে বাধাগ্রস্ত করা এবং জনগণের ভোগান্তি সহ্য করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শে গড়ে তোলা হবে। এ জন্যই আমরা উপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশের জন্য উপযুক্ত পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলছে পুলিশের প্রতি ব্যাপক সংস্কারের আহবান জানান।

পুলিশ বাহিনীর দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দাবি-দাওয়ার প্রয়োজন নেই, বাহিনীর উন্নয়নে এবং আধুনিক ও দক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের দুটি পদের উন্নয়ন ঘটিয়ে গ্রেড-১ করা হয়েছে এবং তাঁর সরকারের অঙ্গীকার অনুযায়ী অপর তিনটি পদের উন্নয়ন ঘটানো হবে।

তিনি বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর আরো ২০টি পদ গ্রে-১-এ উন্নীত করা হবে। তিনি বেসামরিক প্রশাসনে গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের উন্নয়ন ও কল্যাণের বেশীর ভাগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার স্টাফ ট্রেনিং কলেজ, ব্যারাক নির্মাণ ও টিফিন ভাতা বাস্তবায়ন করেছে।

পুলিশের আবাসিক সমস্যা সমাধান ও তাদের চলাচলের জন্য আরো ট্রান্সপোর্ট সংগ্রহের দাবি পূরণে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি পুলিশ স্টেশনের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি যুক্ত করতে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেন।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত