সৌরশক্তিতে সমৃদ্ধ হতে চলেছে বাংলাদেশ: দেশের ১০ শতাংশ বাড়ি এখন সৌরচালিত

1055

Published on জানুয়ারি 28, 2015
  • Details Image

দেশের জাতীয় গ্রীডের সাথে কোনো সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুতের আলোর উপস্থিতিই এই চমকের কারন।

সেই বাড়িটির মালিক, রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের সেই ১ কোটি ৫০ লাখ নাগরিকের অন্যতম যাদের বাড়িতে আছে সোলার হোম সিস্টেম (SHS)। গ্রিডে সংযোগ নেই এমন গ্রামগুলোকে বিদ্যুতায়িত করতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সাল নাগাদ দেশের সকল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চায় । বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে সরকার ২০১৭ সালের মধ্যেই দেশের ৬০ লাখ গৃহের জন্য সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে।

সোলার হোম সিস্টেমের আওতায় প্রতিটি বাড়ির চাল বা ছাদে একটি সৌর প্যানেল বসবে।২৫০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এমন প্যানেল দিনে প্রায় এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।

রফিকুল ইসলামের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সেই ইসলামপুর গ্রামের আরো অনেকেই সোলার হোম সিস্টেম গ্রহণ করেছে। তা ঘরের বাতি জ্বালাবার জন্যই হোক বা কৃষিকাজের সেচ যন্ত্রই হোক।

“আমরা অনেক খুশি, কারণ আমাদের বিদ্যুৎ চলে যাবার আর সুযোগ নেই। কিন্তু যাদের বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে আসে তাদের লোড শেডিং তো নিয়মিত।”, ইসলাম বলেন।

ছেলেমেয়েরাও বাবা-মা’র মতো খুশি। ক’বছর আগেও বাচ্চাদের বিনোদনের উপায় ছিলো, কার্টুন ছবি - ডিভিডি প্লেয়ারসহ টেলিভিশন ভাড়া করে ব্যাটারি দিয়ে চালানো।যা বেশিরভাগ বাবা-মাই বছরে মাত্র দু’বার আয়োজনে সমর্থ হতো।

“বাচ্চারা এখন প্রতিদিনিই বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে”, ইসলাম বলেন। তার মেয়ে জানায়, সে এখন সন্ধ্যার পরও পড়ালেখা করতে পারছে বিদ্যুতের কারণে।

১০ শতাংশ গৃহ সৌর বিদ্যুৎচালিত

সরকার পরিচালিত ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল), যা ২০০৩ সাল থেকে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প শুরু করেছে, জানিয়েছে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ গৃহে, যা দেশের প্রায় দশ শতাংশ।

“প্রতি মাসে, দেশের প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ গৃহে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপিত হচ্ছে। কেবল ২০১৪ সালের মে মাসেই ৮০,০০০টি গৃহে স্থাপিত হয়েছে।” জানিয়েছেন আইডিসিওএল-এর প্রধান মাহমুদ মালিক।

দিপাল সি. বড়ুয়া যিনি বাংলাদেশে সোলার হোম সিস্টেমের একজন পথিকৃৎ এবং বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি বলেছেন, প্রযুক্তিটি ১৯৯৬ সালে সূচিত হলে নানান বাধাবিপত্তি ছিল, যেমন সোলার প্যানেলের অত্যধিক দাম এবং স্থাপনে দক্ষদের স্বল্পতা।

কিন্তু ১৮ বছর বিগত হয়েছে, দুটো বাধাই দূরীভুত এখন, বাৎসরিক প্রায় ২,০০,০০০ টন কেরোসিন বেঁচে যাচ্ছে এই সোলার হোম সিস্টেমের ফলে, যার আর্থিক মূল্যমান প্রায় ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ, বড়ুয়া জানান।

প্রথম সৌর দেশ

“আমার স্বপ্ন হলো ২০২০ সালের মধ্যে দেশের ৭ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশিকে নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সর্বাঙ্গীন সৌরশক্তি চালিত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা”, তিনি বলেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকার তাই সোলার প্যানেল আমদানি ও স্থাপনকাজে স্বল্পসুদে ঋণ দিচ্ছে। অপরদিকে গৃহস্থ বা প্রান্তিক ব্যবহারকারিরা অত্যন্ত স্বল্প আংশিক ‍মূল্য পরিশোধ এবং তিন বছর মেয়াদী কিস্তিতে কেনার সুযোগ পাচ্ছে ব্যবসায়ীদের থেকে। একটি ১০০ ওয়াটের প্যানেল প্রায় ৫০,০০০ বাংলাদেশি টাকা (৬৪০ মার্কিন ডলার)।

এই সোলার হোম সিস্টেম স্কিম ছাড়াও সরকার বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপে ১০০ কিলোওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে যার কার্যক্রম ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী আরও ৫০টি মিনি সোলার গ্রিড চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে ২০১৭ সাল নাগাদ, যার ফলে সার্বিকভাবে ১৫০০টিরও বেশি কৃষি সেচ পাম্প চালানো সম্ভব হবে।

এই খাতে বিনিয়োগকারীদের স্বল্পসুদে ঋণসুবিধাদানের মাধ্যমে সরকার দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগেও উৎসাহিত করছে।

“একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই অগ্রসর হয়েছি”, বলেন আইডিসিওএল এর মাহমুদ মালিক।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত