770
Published on জানুয়ারি 27, 2015প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্রের সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ও চলমান উন্নয়নে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আজ পুলিশ সপ্তাহ-২০১৫ উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কেবল শান্তি বিদ্যমান থাকলে কোন দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের হঠকারী, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা হামলায় প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনা ও আর্তনাদে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এমনকি ছোট শিশুরাও তাদের হিং¯্রতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ধর্মীয় দিবস ও বিশ্ব ইজতেমার সময়ও তাদের হরতাল-অবরোধ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে গত এক বছরে দেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত কোন কারণ ছাড়াই এবারের নৃশংসতা শুরু করেছে। তিনি এ দলগুলোকে তাদের হিং¯্রতা বন্ধের আহ্বান জানান।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ও জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রবৃন্দ ও জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত, নৈরাজ্য ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকা- দমনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনী সর্বোচ্চ কর্তব্যপরায়নতার সাথে এমনকি অনেক সময় তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দায়িত্ব পালন করছে।
পুলিশ সপ্তাহ-২০১৫ উপলক্ষে এ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের এক মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এ উপলক্ষে তিনি ৮৬ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে ৪ বিভাগে পুলিশ পদক-২০১৪ প্রদান করেন।
এর মধ্যে ১০ জন পুলিশ পদক-বিপিএম (সাহসিকতা) ও ২০ জন বিপিএম (সেবা) পদক এবং ১৬ জন পুলিশ সদস্য রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সাহসিকতা) ও ৪০ জনকে পিপিএম (সেবা) পদকে ভূষিত করা হয়। ৩ জনকে দেয়া হয় বিপিএম (সাহসিকতা) (মরনোত্তর) পদক।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতের পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যদের সশস্ত্র প্রতিরোধের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ প্রেমিক পুলিশ বাহিনী শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের প্রধান ভরসা। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব। এ কারণে আমরা যখনই সরকারে এসেছি
পুলিশকে জনবান্ধব, পেশাদার ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত এবং এর ব্যাপক সংস্কার করেছি। পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সকল উন্নয়নের পূর্বশর্ত। আইন-শৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ব্যয় নয়, বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার লক্ষ্যে পুলিশের কৌশলগত পরিকল্পনা, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং পুলিশের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করতে ইতোমধ্যেই আরো ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছি। পাশাপাশি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির যে ধারা আমরা সূচনা করেছি তা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পুলিশ বিভাগে ৭৩৯টি ক্যাডার পদ সৃষ্টি করেছি। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করেছি। এরফরে শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট যেমন ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ এবং ২টি সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে যার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, গাজীপুর ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন এবং স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র বিরোধী অপতৎপরতা রোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের কেটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি নির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ অচিরেই সম্পন্ন করা হবে।
এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, থানাগুলো দৃশ্যত পুলিশের সেবা কেন্দ্র পরিণত হয়েছে। তাই অপরাধ দমনে ও জনগনকে কার্যকর সেবা প্রদানের জন্য প্রত্যেক থানা ও পুলিশকে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণী মর্যাদার পরিদর্শক পদকে প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত করা হয়েছে এবং তৃতীয় শ্রেনীর মর্যাদার উপপরিদর্শক (এসআই)/ সার্জেন্ট পদকে দ্বিতীয় শ্রেনীতে উন্নীত করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে সরকারের জ্যেষ্ঠ সচিব মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে, অন্যদিকে পুলিশ সার্ভিসের অন্য দুইটি ‘গ্রেড- ২’ পদকে সচিব পদের সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের ‘গ্রেড- ১’ কর্মকর্তাদের সংখ্যা প্রয়োজন হলে বাড়ানো হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত ‘আইজিপি র্যাংক ব্যাজ’ বর্তমান সরকার পুন:প্রবর্তন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা ৩০ শতাংশ হারে ঝুঁকি ভাতা পাচ্ছেন এবং পুলিশ বিভাগের সর্বস্তরে ঝুঁকিভাতা প্রবর্তনের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব ও কর্মদক্ষতা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রশংসিত হয়েছে। জাতিসংঘ মিশনে পুলিশ সদস্যদের পাঠানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ছয় বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেশ উন্নয়নের পথে চলছে, বিএনপি- জামায়াত তখন ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি অপশক্তিকে মোকাবিলা করে সবধরনে সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ দূর করে জনগনের জানমাল রক্ষার মাধ্যমে পুলিশের প্রতি তাদের সমর্থন লাভের ব্যাপারে দৃঢ় আশবাদ ব্যক্ত করেন।
পুলিশ পদক- ২০১৪ লাভকারিদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনে দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন এবং জনগনের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করবেন।