দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী

763

Published on জানুয়ারি 25, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য ৪ মাসের প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়- প্রত্যেককে আরো প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এনডিসি) সম্পন্ন করতে বেসামরিক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা গতকাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণকালে এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের এক সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেয়ার ব্যবস্থা করতে তিনি এনডিসি চালু করেন। কিন্তু আমাদের বেসামরিক কর্মকর্তারা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী নয় একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর গুরুত্ব অনুধাবন করে অধিকসংখ্যক কর্মকর্তার এই কোর্স সম্পন্ন করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময় আরো বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারা যেন সমান তালে চলতে পারে এ জন্য প্রত্যেক বেসামরিক কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ বিষয়ে বেসামরিক কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইন ও বিধি-বিধান পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কর্মকর্তাদের দক্ষ ও গতিশীল করতে এবং তাদের যোগ্যতার বিকাশে ২০০৩ সালের বেসামরিক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নীতি পরিবর্তন করতে হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সিদ্দিকী ও সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় এ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কাজের গতি বাড়াতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গোটা প্রশাসনকে ই-গর্ভনমেন্সের আওতায় আনতে চায়।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল খুব শিগগির সংযুক্ত হবে। দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রড ব্রান্ড যুক্ত হবে।

জনপ্রশাসনকে দেশের হৃদপিন্ড হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, প্রশাসনের স্বচ্ছন্দ গতির জন্য সরকার সম্পূর্ণভাবে এ মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভরশীল। এ জন্য এটি সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর ২১ বছর দেশ ছিল লক্ষ্যহীন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের লক্ষ্য নির্ধারণ করে।

তিনি বলেন, অনেক প্রতিবেশী দেশ দ্রুত নিজেদের সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারেনি।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ শিক্ষার হার, খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে তাঁর সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা পারি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমাদের সব সাফল্য ছুঁড়ে ফেলা হয়।

জনগণের মৌলিক দাবি পূরণ করতে না পারলে সরকারের দরকার কি একথা জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সাল থেকে ৭ বছর পর্যন্ত খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনসহ সব খাতে দেশ পিছিয়ে গেছে।

সরকারের ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন ব্যাহত হয় এবং ৫ বছর পর সরকার পরিবর্তন হলে সবকিছুই বদলে যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, জনপ্রশাসন হলো বেসরকারি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। নিয়োগ-বদলি, প্রমোশন, প্রশাসনিক ক্ষেত্রের ব্যবস্থাপনা, সংস্কার, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং আরো অনেক কার্যক্রম এই মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ‘দক্ষ, মেধাবী ও সত্যনিষ্ঠ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং এ লক্ষ্যে তিনি উপনিবেশিক মানসিকতার উত্তরাধিকার বাতিল করেছেন এবং আমরা সামনের দিকে তাকিয়েছি, মানসিকভাবে আধুনিক ও সৃজনশীল হয়ে উঠেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সালনাগাদ দেশকে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালনাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

তবে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। যেকোন জটিল বিষয় আমরা সমাধান করতে পারি এবং আমরা যদি সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি তাহলে যেকোন লক্ষ্য অর্জন করতে পারি একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি তা অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও দৃঢ় অঙ্গীকার।

তিনি ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় এবং তৎপরবর্তী বিএনপি-জামায়াত ও অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর অরাজকতা ও হুমকি মোকাবেলায় সহযোগিতার জন্য আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সকল কর্মকর্তা ও সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচন আমাদের জন্য দশেকে সেবা করার সুযোগ এনে দিয়েছে, আমি এখানে শাসক হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবে তাদের সেবার জন্য এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভবিষ্যত রক্ষ্য জনগণের সেবা করা, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত ও শান্তিপূর্ণ পরিবশে উপহার দিতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ নির্মাণ করতে চাই।’

নিয়মিত জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের মাধ্যমে প্রশাসনকে সক্রিয় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয নীতিমালা ও আইন তৈরি হচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে এ প্রক্রিয়া জোরদারের নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেক আইনী বাধার কারণে তাঁর সরকারের জন্য প্রশাসনে পদোন্নতি প্রদান ছিল একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে সরকার এ সব মামলার সুরাহা করেছে এবং পদোন্নতি পথ খুলেছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে ৬টি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মোট ১৭ হাজার ৮৪৬ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং ৩৪তম ও ৩৫তম বিসিএস’র ৪ হাজার ৩৬০ কর্মকর্তার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে তিনি এ প্রক্রিয়া জোরদারের নির্দেশ দেন।

তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো সহজ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদারে বিশেষ করে শিক্ষক, চিকিৎসক ও পুলিশের নিয়োগে বিভিন্ন উইং খোলার ওপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সরকার ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উল্লেখ করে তিনি এ প্রক্রিয়া জোরদারের জন্য পিএসসিকে নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নাতি, নিয়োগ, কল্যাণে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, সরকার ৯২ জনকে সচিব পদে, ৩০৬ জনকে অতিরিক্তি সচিব, এক হাজার ১১৩ জনকে যুগ্ম সচিব এবং এক হাজার ৮২ জন কর্মকর্তাকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে, যা অভূতপূর্ব।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন বিভিন্ন অধিদপ্তর ও দপ্তরের সর্বোচ্চ ৩০টি পদকে ১নং গ্রেডে এবং ২০টি পদকে ২নং গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণীর ২১৯ জন কর্মকর্তাকে নন-ক্যাডার সহকারী সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্তব্যের সীমা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের আলোকে ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সামাজিক মান-সম্মানের বিষয় বিবেচনা করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩৫টি পদের পুনঃনামকরণ করা হয়েছে, তাদেরকে ভালো কাজে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ‘জনপ্রশাসন পুরস্কার’-এর বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নীতি প্রণয়ন করতে চায়। তিনি বলেন, এরই প্রেক্ষিতে সরকার ঢাকা বিভাগকে দুইটি প্রশাসনিক ভাগে বিভক্ত করার এবং ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেখ হাসিনা নবপ্রতিষ্ঠিত সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

প্রত্যেক বিভাগ, জেলা এবং উপজেলার উচিত- কৃষি জমির কোন ক্ষতি না করে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য তাদের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি উপজেলাকে একটি মহাপরিকল্পনার আওতায় উন্নয়ন করা উচিত।

তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ‘খাস জমি’ হিসেবে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও তিনি উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বসবাসযোগ্য ফ্ল্যাট নির্মাণের নির্দেশ দেন।

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণে সরকারের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নতুন ’পে-কমিশন’ বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি অন্য মন্ত্রণালয়গুলো থেকে সিদ্ধান্তের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ফাইলসমূহের ব্যাপারে আরও যতœবান হতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, যাতে তাদের ঢিলেমির জন্য সেগুলো দীর্ঘসময় পড়ে না থাকে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত