476
Published on ডিসেম্বর 24, 2014
তিনি আরো বলেন, ‘পাপকে ঘৃণা কর- পাপীকে নয়’, এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সরকার কারা প্রশাসন পরিচালনা করছে। তাই সরকার কারাগারের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, আদিকালে মূলত অপরাধীদের সাজা প্রদানের জন্যই কারাগার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সভ্য দুনিয়ায় কারাগারকে সংশোধনাগার এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
কারা সপ্তাহ উদযাপনে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পর কারা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। আমি আশা করি, এ সপ্তাহ পালনের মধ্যদিয়ে আপনাদের কর্মস্পৃহা আরো বাড়বে এবং বন্দীদের সুশৃঙ্খলভাবে নিরাপদ আটক ও তাঁদের প্রতি মানবিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধীদের নিরাপদে আটক রাখার মাধ্যমে সমাজে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অটুট রাখতে কারারক্ষীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে কারাগারের ভেতর থেকে জঙ্গি তৎপরতা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে সে লক্ষে কারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যারা এ সমস্ত জঙ্গি, সন্ত্রাসী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর কারা বিভাগের সদরদপ্তর সহ দেশে ৩৬টি কারাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। যার সুফল এখন কারাবন্দীসহ পুরো কারা প্রশাসন ভোগ করছে। বন্দীদের বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কারা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে প্যারেড গ্রাউন্ডে আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কারারক্ষীদের বিভিন্ন গ্রুপ মার্চ পাস্ট করে এগিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে ‘কারা স্মৃতি জাদুঘর’ স্থাপন করে। একে জাতীয় জাদুঘরের শাখা জাদুঘর হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের পর এ জাদুঘর দুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। যাতে জনগণ জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার কারাবাসকালীন স্মৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একশ’ বছরের পুরণো ও জরাজীর্ণ খুলনা জেলা কারাগার অন্যত্র সরিয়ে নিতে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারও অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ, নাটোর, নিলফামারী এবং নেত্রকোণা জেলায় ইতোমধ্যেই নতুন কারাগারি উদ্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, মাদারীপু ও পিরোজপুরে নতুন কারাগারের নির্মাণ কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নতুন পেরিমিটার নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কারা জীবনের অবসানের পর বন্দীদের পুনর্বাসনেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কারাবন্দীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে তাদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কারাবন্দীদের উৎপাদিত পণ্যের দেশে ও বিদেশে চাহিদা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার একটি বহু তলাবিশিষ্ট সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সম্মেলন কেন্দ্রের আয় দিয়ে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারা বিভাগের প্রতিটি সদস্য একটি মহৎ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। ফলে তাদের জন্য পাবলিক সার্ভিসে নিজেদের সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, কারাগারে আটক বন্দীদের শৃংখলার মধ্যে থাকতে হবে। কোনো অপরাধীই যেনো কারাগারে এসে বড় অপরাধী হয়ে বের না হয়। কারাগারে বন্দীদের বন্দী হিসেবে না দেখে তাদের সমাজের সাধারণ সদস্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরে কারাবন্দীদের এক বিশেষ দরবারে যোগ দেন। সেখানে তাদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর মতো ভবিষ্যতে কারাবন্দীদের জন্য তাজা রসদ ভাতা প্রদানের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সাহসী ও কল্যাণমূলক কাজে অনন্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের অপরাপর বাহিনীর ন্যায় কারাবন্দীদের জন্য পদক প্রদানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের বর্তমান জনবল বাড়ানো হবে এবং কারারক্ষীদের জন্য নিরাপদ আবাসিক সুবিধা প্রদানেরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।