453
Published on ডিসেম্বর 22, 2014তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমরা সকল ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শক্ত হাতে দমন করায় এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের (বিসিএ) সভাপতি ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আর্চ বিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী এবং বিসিএ’ র মহাসচিব নির্মল রোজারিও।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে ওই সময় সারাদেশে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছিল।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে জনগণের সাড়া না পেয়ে তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের জন্য পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, যানবাহন ও মসজিদে আগুন দেয়া এবং পবিত্র কুরআন শরীফ পোড়ানোসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছিলো।’
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, এ কারণে সে সময় দেশের খ্রিস্টান সম্পদায়কে আতঙ্কের মধ্যে বড়দিন উদযাপন করতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে কঠোর হাতে দমনের মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের ৫ বছরের শাসন আমলে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময়ে সকল ধর্মের লোকজন তাদের নৃশংস নির্যাতন ও দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদের ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে তা অবর্ণনীয়। তিনি আরো বলেন, গোপালগঞ্জে গীর্জায় বোমা বিস্ফোরণ এবং পাবনার গ্রামে ২শ’ খ্রীষ্টান পরিবারের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, তখন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জাসহ ধর্মীয় স্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করতেন। তিনি সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন এবং সকল ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলে গেছেন।
তিনি বলেন, দুঃখজনক যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সামরিক শাসক গোষ্ঠী দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে দূরে সরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ফলে সকল ধমের্র বিশ্বাসের লোকজনের ওপর হামলা ও নির্যাতন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর সমাজে অসাম্প্রদায়িক চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে সকল ধর্মের লোকজন সমান অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে।
ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পূজা, ঈদ, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিনসহ বিভিন্ন জাতি উৎসব-উদযাপনের জন্য সকল ধর্মের বিশ্বাসের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, সকল ধর্মের মূল চেতনা হচ্ছে মানবতা। যীশু খ্রীষ্ট মানবতার কল্যাণে সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার চায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির পরিবেশে বসবাস করছে।
শেখ হাসিনা একটি মর্যাদা শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সেবা করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয়ী বাঙালি জাতি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে অবশ্যই দাঁড়াতে পারবে।
শেখ হাসিনা বক্তৃতাকালে বড়দিন উপলক্ষে সারাদেশের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিনন্দন জানান এবং তাদের সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন কামনা করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি বড়দিনের কেক কাটেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশের শান্তি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে যীশু খ্রীস্টের আশির্বাদ কামনা করে একটি বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
বিসিএ সভাপতি এডভোকেট প্রমোদ মানকিন ও মহাসচিব নির্মল রোজারিও এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বড়দিনের কার্ড ও ফুলের তোড়া উপহার দেন। এ উপলক্ষে গণভবনে একটি ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। এছাড়া বড়দিনের তাৎপর্য, যীশুর প্রশংসা এবং দেশ প্রেমমূলক গান পরিবেশন করা হয়।