কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে দলের সভা অনুষ্ঠিত

451

Published on ডিসেম্বর 17, 2014
  • Details Image

তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপি চেয়ারপার্সনকে তার নষ্ট ছেলের বক্তৃতাকালে মুখ সামলে কথা বলাতে নির্দেশনা দেয়ার পরামর্শ দেব। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই এ ধরনের অমর্যাদাকর বক্তব্য মেনে নেবে না।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিজয় দিবস-২০১৪উদযাপন উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভাষণদানকালে এ পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনকালে ২১ আগস্টের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা ও অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের অবশ্যই ধরা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সকল রায় একের পর এক কার্যকর করা হবে। কেউ তাদের বিচার প্রক্রিয়া থেকে বাঁচাতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী দু’টি দুর্নীতি সম্পর্কিত মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে অনীহার জন্য বেগম জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি যদি খুব সৎ হন তবে আদালত মোকাবেলায় ভয় পান কেন। আদালতে আপনার আইনজীবীদের আচরণও কোন সভ্য দেশে নজীরবিহীন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও ফজলুল করিম সেলিম।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাসিম এবং দলের সিনিয়র নেতা এডভোকেট কামরুল ইসলাম।

সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসিম কুমার উকিল

বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এই দেশের জনগণকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর নির্দেশে বাঙালি জনগণ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর আহ্বানে জনগণ শত্রুর প্রতিরোধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের অনেক আগেই লন্ডনে এক সভায় বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী যদি নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ অথবা প্রত্যাখ্যান করে সে ক্ষেত্রে তাঁর করণীয় সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিত্ব এবং বিদেশী বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লন্ডনের সভাতেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী যদি বাঙালি জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। কারণ এদেশের জনগণ সবসময় বঞ্চিত ছিল এবং তারা কখনো স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ১৯৫৪ এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের আইন পরিষদে ভাষণে বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অস্তিত্বের বাস্তবতা সম্পর্কে জাতিকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ যখন অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছিলো, তখন স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। তাঁর হত্যাকা-ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন এবং বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা বন্ধ করে দেন।

তিনি বলেন, বিএনপি দাবি করে জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এটি যদি সত্য হয়, তাহলে জিয়াউর রহমান কিভাবে যুদ্ধাপরাধীদের তার মন্ত্রী ও উপদেষ্টা করেন ?

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে যোগদান নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং তাদের ভোটাধিকার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান তাদের এই অধিকার ফিরিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যদি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাহলে রাজাকার ও আল-বদরদের সঙ্গে তাদের এই দহরম-মহরমের কারণ কি ?

তিনি বলেন, বেগম জিয়া যদি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন তাহলে কখনো যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিতেন না। জিয়া এবং তার স্ত্রী যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন।

তিনি আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা ২০০১ ও ২০১৩ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মতো জনগণের ওপর একই ধরনের বর্বরতা চালিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন আদালতের রায়কে মানছেন না। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও এর চেতনার বিরোধীতা করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের মন্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সজীব একজন আইসিটি বিশেষজ্ঞ। আইসিটির ওপর তার দু’টি ডিগ্রি রয়েছে। সে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আইসিটির ওপর পোস্ট গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছে। জয় বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পথিকৃত। এই পরিপ্রেক্ষিতে সে সরকারকে স্বেচ্ছামূলক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ জয়ের অবৈতনিক নিয়োগে লাখ লাখ টাকা খরচের সংশ্লিষ্টতা কোথায় পেলেন ?

শেখ হাসিনা বলেন, আদালতের নির্দেশেই খালেদা জিয়াকে তার ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবন ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখানে সরকার ও আওয়ামী লীগের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বর্তমানে সেখানে বহু সেনা কর্মকর্তার আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান তাঁকে বিদেশ থেকে দেশের ফেরার অনুমতি দিয়েছেন বলে সম্প্রতি বিএনপি নেতৃবৃন্দ যে দাবি করছেন, সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া আমার সঙ্গে দিল্লী অথবা লন্ডনে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন’। কিন্তু জিয়ার হাত রক্তে রঞ্জিত ছিল বলে তিনি তার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হননি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফেরার পর জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি, এমনকি সেখানে মিলাদ পড়ারও অনুমতি দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে বেগম জিয়া ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ জঘন্য মিথ্যা বলছেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত