1183
Published on ডিসেম্বর 13, 2014সফল এই রাষ্ট্রীয় সফরে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যেন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পর্যটন বিষয়ে একটি সমঝোতার স্মারক স্বাক্ষর, ভিসার প্রয়োজনীয়তা বাতিলকরণ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান।
প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ সম্বর্ধনা প্রদান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গতিময় করার উদ্দেশ্যে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া পৌঁছালে সেখানে তাকে লাল গালিচা অভ্যদর্থনা দেয়া হয়।
মালয়েশিয়ার জনসম্পদ বিষয়ক উপমন্ত্রী হাজি ইসমাইল হাজি আব্দুল মুত্তালিব এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম আতিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী তাঁকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে।
পরে, একটি সুসজ্জিত মোটরযান বহর প্রধানমন্ত্রীকে কুয়ালামপুরের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে পৌঁছে দেয়, যেখানে তিনি সফরকালীন সময়ে অবস্থান করবেন।
চারটি চুক্তি স্বাক্ষর
চুক্তিগুলো হলো: ভিসার প্রয়োজনীয়তাকে আংশিকভাবে নিরসনের সমঝোতা, পর্যটন খাতে সহযোগিতার জন্য সমঝোতার স্মারক স্বাক্ষর, ২০১২ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতার স্বারক যেখানে মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ সুবিধার কথা ছিল সেটির নবায়ন এবং সংস্কৃতি, শিল্প ও ঐতিহ্য বিষয়ে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর।
চুক্তি স্বাক্ষরের অব্য বহিত পরেই একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে, ফলে পারস্পরিকভাবে লাভবান হবে প্রত্যেকেই”।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুত্রাজায়া’র পার্দানা পুত্রাতে এই স্বাক্ষর প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ব্যাপক সাফল্য অর্জন
চুক্তিগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে, যেখানে ১২,০০০ শ্রমিক আগামী বছরের শুরুতেই কাজের জন্য মালয়েশিয়া যেতে পারবে, আর এর মাধ্যমে তাদের সারাওয়াক প্রদেশের বৃক্ষরোপন কর্মসূচীতে শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে।
সাংবাদিকদের তাঁর সফর সম্পর্কে অবহিত করার সময়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১-২০০৭ মেয়াদে ব্যর্থতার কারণে প্রায় ২.৭ লক্ষ শ্রমিক মালয়েশিয়াতে অবৈধ হয়ে যায়। ফলে, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ বন্ধ করে দেয়”।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারের ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে এনে একটি মুক্ত বাণিজ্য সমঝোতা (FTA) এর ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে।
কুয়ালালামপুর ঢাকাকে ঢাকাকে আশ্বাস দিয়েছে তারা আসিয়ানে সংলাপের অংশীদার হতে সমর্থন দেবে এবং পরবর্তী বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট কমিশনের সভার আয়োজক হবে আগামী বছরে। এই জয়েন্ট কমিশনের সর্বশেষ সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৫ সালে।
এই আশ্বাসটি পাওয়া গেছে পুত্রাজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পার্দানা স্কোয়ারে দুইদেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। এই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব আব্দুল রাজাক তাঁদের যার যার দেশের নেতৃত্ব দেন। উভয় দেশেরই মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মালয়েশিয়ান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে কাজ শুরু
মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং মালয়েশিয়ার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রোটন হোল্ডিংস বারহাদ এর চেয়ারম্যান ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, 'প্রোটন' শীঘ্রই বাংলাদেশে তাদের প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করবে, যার ফলে প্রচুর বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ড. মাহাথির, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর গ্রান্ড হায়াট হোটেল সুইটে এক সান্ধ্য সাক্ষাতে এই কথা জানান।
সাক্ষাৎ শেষে, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরি বলেন ড. মাহাথির বাংলাদেশের অগ্রগতির উচ্চকিত প্রশংসা করেছেন।
শেখ হাসিনা বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সাফল্য ও অর্জনসমূহ তুলে ধরেন এবং সুবিধাজনক সময়ে ড. মাহাথিরকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
মালয়েশিয়া স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণে আগ্রহী
মালয়েশিয়া হাউজিং প্রকল্পের অধীনে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকাতে স্বল্পমূল্যে গরীবদের সামর্থ্যের মধ্যে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেবার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক বিশেষ দূত সেরি সামি ভেল্লু এই আগ্রহ দেখান যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্প আয়ের লোকেদের জন্য এমন ফ্ল্যাট নির্মাণে সহায়তার অনুরোধ জানান।