'বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরষ্কার-১৪১৯' প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী

1302

Published on ডিসেম্বর 13, 2014
  • Details Image

জৈব সার ব্যবহারের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাটির উর্বরতা, মৎস্য ও মিঠাপানির উৎসসমূহ রক্ষায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

আজ নগরীর ওসমানী মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার-১৪১৯’ বিতরণকালে পেশা হিসেবে কৃষিকে উপেক্ষা না করার জন্য শিক্ষিত কৃষকদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘সকল আধুনিক প্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট তথ্যজ্ঞান প্রয়োগ করে পৈতৃক খামারে শিক্ষিত যুবকরা আত্মকর্মসংস্থান খুঁজে নেবে এটি একটি গর্বের বিষয়।’

শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, তাঁর সরকারের বর্তমান মেয়াদের আগামী ৪ বছরে দারিদ্র্য ১০ শতাংশ কমিয়ে আনবে।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম নাজমুল ইসলাম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

কৃষি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৩০ ব্যক্তি ও সংস্থাকে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪১৯’ প্রদান করা হয়েছে।

এদের মধ্যে ৫ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, ৮ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রূপা ও ১৭ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্রোঞ্জ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যেকোন সম্ভাব্য দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার কৃষিখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

এই লক্ষ্যে তাঁর সরকার সার, সেচ, জ্বালানী এবং কৃষি যন্ত্রপাতি জনগণের কাছে সহজলভ্য করাসহ কৃষিখাতকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের কৃষিখাতে যেকোন সহায়তা করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো অনাগ্রহী। তাদের অসম্মতির বিষয়টি বুঝতে পেরেই কৃষির বিষয়টিকে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ছয় বছরে কৃষিখাতের উন্নয়নে ৪৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, উপরন্তু কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

কৃষকদেরকে কৃষি সহায়তা কার্ড দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদেরকে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

কোন জামানত দিতে না পারার কারণে সাধারণত বর্গাচাষীদেরকে কোন ব্যাংক ঋণ দেয়া হতো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেই নিয়ম বাদ দিয়ে বর্গা চাষীদেরকেও খুবই স্বল্প সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি সহায়তা শুধু ধানেরই নয়, বরং শাক-সবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, মাছ এবং মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মিঠা পানির মাছ উৎপাদনকারী রাষ্ট্র বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উদ্যোগ ও সহযোগিতার কারণে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে চাল উৎপাদন বেড়ে ৩৮৩ দশমিক ৪৩ লাখ মেট্রিক টন দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ছিল ৩৩৩ লাখ মেট্রিক টন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক ব্যক্তির চমকপ্রদ গবেষণা সাফল্যে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে রয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কেবল কৃষিখাতেই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, যোগাযোগ, দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জন করতে পারবো।

‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ চালু করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষককে কৃষিতে উৎসাহিত করতে এবং ‘সোনার বাংলা’ গঠনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ১৯৭৩ সালে এই পুরস্কার চালু করা হয়।

তবে ১৯৭৫ সালে মর্মান্তিক রাজনৈতিক ঘটনাবলীর পর সামরিক শাসকরা এই পুরস্কার প্রদান স্থগিত করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই পুরস্কার পুনরায় চালু করা হয়।

পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর ওই তহবিলে হস্তাক্ষেপ করে এবং মর্যাদাপূর্ণ এই জাতীয় পুরস্কার থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেয়।

‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৯’ প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই পদক তাদের দায়িত্বশীলতার সীমা আরো সম্প্রসারিত করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন আপনারা আপনাদের কার্যক্রমের এলাকা বাড়িয়ে দিন এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করুন যাতে তারা কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এগিয়ে আসেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত