সরকার ‘ব্লু ইকনোমি’র ধারনার বাস্তবরূপ দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধঃ প্রধানমন্ত্রী

377

Published on ডিসেম্বর 11, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদের আহরণ ও সর্বোচ্চ ব্যবহারে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তিনি গতকাল এখানে কোস্ট গার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রার উদ্বোধনকালে আরো বলেন, কোস্ট গার্ড বিশাল সামুদ্রিক এলাকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।

শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, কোস্ট গার্ড সদস্যগণ তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে দেশের সামুদ্রিক ও উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।

তিনি বলেন, কোস্ট গার্ড তাদের আন্তরিক সেবা ও দক্ষতার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে বিশ্বাস ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়।

প্রধানমন্ত্রী ওয়াটার ডেকে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মকবুল হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান।

মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, রাষ্ট্রদূতগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশে নৌবাহিনী প্রধান এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ঘাঁটিটির কমান্ডেন্ট ক্যাপ্টেন কায়সারুল আলমের কাছে কমিশনিং সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন। তিনি এর নামফলকও উন্মেচন করেন।

কুয়াশার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা থেকে উপকূলীয় এই জেলায় পৌঁছতে প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, কোস্ট গার্ডের মূলমন্ত্র হচ্ছে সমুদ্রের অভিভাবক (গার্ডিয়ান এ্যাট সি)। এজন্য সরকার কোস্ট গার্ডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের প্রায় সমপরিমাণ হচ্ছে সমুদ্র এলাকা। সমুদ্র সম্পদের ওপর দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্র সীমা সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির পটভূমিতে কোস্ট গার্ডের গুরুত্ব আরো বেড়েছে। নতুন প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই ঘাঁটি এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক সংস্থার জন্য প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকার সকল ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এই ঘাঁটির উদ্বোধনের মাধ্য্রমে কোস্ট গার্ডের ক্রমাগত উন্নয়নে আরেক ধাপ অগ্রগতি হলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো এর আগে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ বন্দরসমূহের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গর এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে কোস্টগার্ড অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক বন্দরকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা প্রদানে কোস্টগার্ডের প্রশংসা করছে। পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ড সক্ষম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুতা দমন, চোরাচালান বিরোধী অভিযান, জাটকা নিধন প্রতিরোধ ও মা-ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ডকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক ও মানবসম্পদ পাচার রোধেও কোস্টগার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার জনগণকে আরো সেবা দেয়ার লক্ষ্যে কোস্টগার্ডকে গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এতে একটি জোন, তিনটি বেইস, ১৮টি স্টেশন, ১০টি আউট পোস্ট, ৫৭টি বিভিন্ন ধরনের জলযান, ৮টি পন্টুন ও ১ হাজার ২৮২ জনবল যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৮টি জলযান ও ৮টি পন্টুন নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলো খুব শিগগিরই কোস্টগার্ড বহরে যুক্ত হবে। সম্প্রতি বৃহৎ আকারের ৮টি অফশোর পেট্রোল ভেসেল সংযোজনের প্রক্রিয়া নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ ও সেবামূলক বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সাল থেকে চালু বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পদক ও প্রেসিডেন্ট কোস্টগার্ড পদক এ বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি ও পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে অবদান রাখছে।

একই স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।

তিনি পটুয়াখালী পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উত্তর কারখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, কলাপাড়ায় আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, গলাচিপায় ছোট চরকাজল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং পটুয়াখালী সদরে কাচাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়ায় আনসার ও ভিডিপি ব্যাটেলিয়ন হেড কোয়ার্টার্স, পটুয়াখালীতে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) হোস্টেল, পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশ ব্যারাক, গহীনখালি বাজার ও আশ্রয়কেন্দ্র, রাঙাবালিতে সংযোগ সড়ক, বাউফলের বগাতে ১০-শয্যার মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পটুয়াখালী সদর পুলিশ লাইনে নতুন ৬-তলা ভবন ও দশমিনায় ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।

তিনি সিজি বেইস অগ্রযাত্রা ঘাঁটি প্রাঙ্গণে একটি সফেদার চারা রোপণ করেন।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত