সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পুনরায় আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

609

Published on ডিসেম্বর 9, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের অগ্রগতির জন্য অবশ্যই নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটি বাস্তবতা, অগ্রগতি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সমাজের অর্ধেককে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নয়ন অথবা অগ্রগতি হতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস এবং বেগম রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

তিনি নারী শিক্ষা বিস্তার এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক মমতাজ বেগম এবং মিসেস গোলাপ বানুর হাতে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেন।

শিশু ও নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।

অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। এছাড়া বেগম রোকেয়া পদক-২০১৪ বিজয়ী অধ্যাপক মমতাজ বেগম এবং মিসেস গোলাপ বানু তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেন, কোন মেয়ে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। তাঁর সরকার বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি মহান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বলেন, ভবিষ্যতে আর কখনোই এমন পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হবে না, যাতে নারীরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিটি নারী শিক্ষিত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়া স্বপ্ন দেখতেন, সমাজের অবহেলিত নারীরা শিক্ষিত হবে এবং স্বাবলম্বী হবে। তার এই স্বপ্নের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি প্রতিটি শিক্ষিত নারীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়ার জন্ম না হলে এবং তিনি শিক্ষার পথ না দেখালে দেশের অগ্রগতি হতো না। তিনি সমাজে একটি বিপ্লব এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের অনেক নারী স্বাধীনতার জন্য এবং নারীর সম্মান ও তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বেগম রোকেয়া পদক-২০১৪ বিজয়ীদেরকে তাঁর আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, নারীদের উন্নয়নে অবদান রাখার ক্ষেত্রে এই পদক প্রদান নারীদেরকে আরো উৎসাহিত করবে। শেখ হাসিনা বেগম রোকেয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বেগম রোকেয়া ছিলেন নারী শিক্ষার পথিকৃৎ এবং একটি ইনস্টিটিউশন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়ার আদর্শ, অনুপ্রেরণা, শক্তিশালী মানসিকতা ও কর্ম নারী জাতির মুক্তির পথ দেখাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় মুসলিম মহিলারা ঘরে বন্দী থাকতেন। কুসংস্কার, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষাহীন জীবন ছিল তাদের নিত্যসঙ্গিনী। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তাদের কোন স্বাধীনতা ছিল না।

তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া ঘরে বন্দী থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে কেবলমাত্র শিক্ষার আলোর মাধ্যমে নারীর সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা সম্ভব। এটাও তিনি বুঝেছিলেন যে সমাজের উন্নয়নের জন্য কেবল পুরুষ নয়, নারীর অংশগ্রহণও অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে তিনি শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই যুগে এটা ছিল এক সাহসী পদক্ষেপ। তার এই অসামান্য অবদানের ফলশ্রুতিতে আজ নারী শিক্ষায় উন্নতি সাধিত হয়েছে।

নারী উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয় নীতি, প্রকল্প কর্মসূচি ও শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিনামূল্য শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও বৃত্তি দেয়ায় নারী শিক্ষার হার বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নারী উন্নয়ন নীতি ২০১৪ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন-২০১০ প্রণয়ন করেছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০ মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসেটিভ বাজেট তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সংরক্ষিত নারী আসন এক তৃতীয়াংশ হয়েছে। এসব আসনে সরাসরি নির্বাচন হওয়ায় নারীর ক্ষমতায় বহুগুণ বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপের ২০১৩ সালের রিপোর্টে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ৭ম স্থানে রয়েছে।

বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও স্পিকার হচ্ছে নারী। এছাড়া মন্ত্রী পরিষদ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও অন্যান্য স্তরে নারীর শক্তিশালী অংশগ্রহণ রয়েছে।

বেগম রোকেয়া পদক ২০১৪ বিজয়ী প্রফেসর মমতাজ বেগম তার অনুভূতি প্রকাশকালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, এই মহিয়সী নারী তাকে নারী কল্যাণে নিয়োজিত হতে অনুপ্রাণিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমি বেগম মুজিবের পরামর্শে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। নারীরা যেন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক বাড়িতে এ ধরনের পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ বেগম।

মিসেস গোলাপ বানু বলেন, নারীরা পশ্চাদপদ নয়, তবে তাদের সাহসের অভাব রয়েছে। আমাদের সাহস নেই এবং সবকিছুতে ভয় পাই।

তিনি নারীদের সঙ্গে অব্যাহত সংগ্রামের প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমার একাডেমিক কোন শিক্ষা নেই। তবে আমার স্মৃতি শক্তি খুব ভাল। আমি নারীদের নিয়ে আমার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে চাই।

বারিধারা সমবায় সমিতি লি. প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে গোলাপ বানু বলেন, নারীরা পুরুষদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চায়। পুরুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে কোন সমস্যা হবে না।

১৯৯৫ সালে বেগম রোকেয়া পদক প্রবর্তিত হয়। এ পর্যন্ত ৩৭ জন নারী এ পদক পেয়েছেন। বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ ১৯৯৫ এবং প্রফেসর হামিদা বানু ও ঝরনা ধারা চৌধুরী ২০১৩ সালে এই পদক লাভ করেন।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত