468
Published on ডিসেম্বর 7, 2014তিনি বলেন, অনেক ক্রেতা ও তাদের প্রতিনিধি আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন। আমি পণ্যের দাম বাড়াতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাই। এর ফলে আমাদের শ্রমিক ভাই ও বোনেরা আরো সাচ্ছ্বন্দময় জীবনযাপন করতে পারবে এবং তখন সকলে উন্নয়নের সমঅংশীদার হবেন।
দেশের অতি সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক খাতকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। কিন্তু অনেকে এটা পছন্দ করে না। এ জন্য তারা এ খাতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, যে কোন সমস্যা সমাধানের সামর্থ আমাদের রয়েছে। এ জন্য আমি এই খাত রক্ষায় দেশী ও বিদেশী এ চক্রের বিরুদ্ধে সদা সজাগ থাকতে গার্মেন্ট মালিক, শ্রমিক, বিদেশী ক্রেতা ও ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘ঢাকা এ্যাপারেল সামিট’ উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা দেশের তৈরি খাতের জন্য আগামীদিনের রোডম্যাপ প্রণয়নে ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপো ফর বিল্ডিং এ্যান্ড ফায়ার সেফটি-২০১৪ এবং সেন্টার ফর বাংলাদেশ এ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির’ উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এই সামিট ও এক্সপো’র আয়োজন করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু,বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
এছাড়া এতে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ইকোনমিক কো-অপারেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পার্লামেন্টারি স্টেট সেক্রেটারি হেনস-জোয়েচিন ফুচেল, ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট ডেলিগেশন ফর রিলেশনস উইথ দ্যা কান্ট্রিজ অব সাউথ এশিয়ার চেয়ারপার্সন জেন ল্যাম্বার্ট, এলাইয়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স ফর সেফটির চেয়ারম্যান এলেন তুসচার ও এইচএসবিসি ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ফ্রাঙ্কোইচ দি মেইকো বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমই সভাপতি আতিকুল ইসলাম, স্বাগত বক্তৃতা দেন ফার্স্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেকেন্ড ভাইস-প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি।
শেখ হাসিনা তৈরি পোশাকের আরো নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানে দেশের রফতানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ প্রয়াসে সরকার আপনাদের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার তৈরি পোশাকের বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও জাপান জিএসপি’র রুলস অব অরজিন শিথিল করেছে। বর্তমান সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ ভারতে ৪৬টি পণ্য এবং চীনে ৯৮ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। এজন্য আমি পোশাক রফতানিকারকদের আহ্বান জানাই যে এসব সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহার করুন, সরকার আপনাদের পাশে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বাজার বাড়াতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার বাড়াতে স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, গার্মেন্টস পণ্যের শেয়ার বাড়াতে হবে এবং সে সামর্থনও আমাদের রয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতকে আরো শক্তিশালী করতে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন টেকসই শিল্পের অগ্রগতিতে গবেষণা ও উন্নয়নের বিকল্প নেই।
তিনি আইএলও’র সহযোগিতায় বাংলাদেশে বস্ত্র শিল্পের জন্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠায় বিজিএমইএ’র উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তাঁর সরকার দেশে বিনিয়োগের উত্তম পরিবেশ গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে একথা উল্লেখ করে তিনি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করা। এ জন্য ব্যাপক শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে তৈরি পোশাক খাত এগিয়ে চলছে এবং আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় এ খাতের পাশে রয়েছে। আমাদের এই ভূমিকা অব্যাহত থাকবে এবং সরকার হিসেবে এটিই আমাদের দায়িত্ব।
তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন, গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে অ্যাকর্ড এ্যালায়েন্স এবং ন্যাশনাল এ্যাকশন প্লানের আওতায় ২ হাজার ১৯৩ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। অধিকাংশ কারখানাই ত্রুটিমুক্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অবশিষ্ট কারখানার নিরাপত্তা উন্নয়নে সংস্কার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কারখানায় নিরাপদ উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। এ জন্য সরকার, বিজিএমইএ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমন্বিতভাবে নিরাপদ, টেকসই ও কমপ্লায়েন্ট কারখানা স্থাপন নিশ্চিত করছে। পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সফল হবে বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিংয়ের কাঁচামাল ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে তাঁর সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ১ হাজার ৬৬২ টাকা থেকে ৫ হাজার ৩শ’ টাকায় উন্নতি হয়েছে। পাঁচ বছরে তাদের বেতন ২২০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বের কোথাও মজুরি বৃদ্ধির এমন উদাহরণ নেই।
তিনি বলেন, শ্রম আইন যুগোপযোগী ও শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের জন্যও অনেক ডরমিটরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জে একটি গার্মেন্টস ইকোনোমিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াট এবং দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ১৭শ’ মিলিয়ন ঘন ফুট থেকে ২৫শ’ মিলিয়ন ঘন ফুটে উন্নতি করেছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।