433
Published on নভেম্বর 21, 2014প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী যাতে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, এলক্ষ্যে বর্তমান সরকার এ বাহিনীর অধিকতর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৪ উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যবর্গ এবং বীরউত্তম, বীরবিক্রমসহ নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্তদের সম্মানে এক সংবর্ধনায় ভাষণকালে একথা বলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিকুল হক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক এবং সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী ও উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সবার দায়িত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা।
তিনি বলেন, বহু আত্মত্যাগ ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই সবার দায়িত্ব হচ্ছে এই মহান অর্জনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে সমুন্নত রাখা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহান নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নেয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যগণ ও সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে শরীক হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এবং আমরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পেয়েছি।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রত্যেক দুস্থ মুক্তিযোদ্ধার বাসস্থান ও জীবিকা নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের খাস জমির পাশাপাশি ভাতা দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বীরশ্রেষ্ঠদের ১২ হাজার টাকা, বীরোত্তমদের ১০ হাজার টাকা, বীরবিক্রমদের ৮ হাজার টাকা এবং বীরপ্রতীকদের জন্য ৬ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ সর্বনিম্ন ৯ হাজার ৭শ’ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে যা ২০১৩ সালে জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার এসব প্রতিষ্ঠানকে আবারো লাভজনক করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি ও দক্ষতা আরো বাড়াতে বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম এখন আর কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে। তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার কেবল সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নেই নয়, গোটা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নেও কাজ করছে।
তিনি বলেন, যেভাবে দেশের মানুষ বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, তাঁর সরকারও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে জয়ী হবে এবং বর্তমান এর হার ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ আর পেছনে পড়ে থাকবে না, সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং ২০২১ সালের আগে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত হবে।
তিনি এর আগে অনুষ্ঠানে সাত বীরশ্রেষ্ঠর নিকটাত্মীয়সহ ৫৯ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীর হাতে উপহার হিসেবে সম্মানী চেক, মোবাইল ফোন সেট ও শাল তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-১৪ সালের জন্য বীরত্ব ও সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সশস্ত্র বাহিনীর ২৬ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার হাতে ‘বাহিনী পদক’ ও ‘অসামান্য সেবা পদক’ তুলে দেন।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল