578
Published on নভেম্বর 2, 2014প্রধানমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণকালে আরো বলেন, অবহেলিতদের কল্যাণ নেয়া প্রকল্পগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজধানীর পথশিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে সরকার একটি তালিকা করেছে। এটা বাস্তবায়ন করা কোন কঠিন কাজ নয়। আমরা চাইলে এটা করতে পারি।
শেখ হাসিনা তাঁর মন্ত্রণালয়গুলো পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মোহসিন আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এবং মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৬ সালে তাঁর সরকারের প্রত্যেক মানুষকে খড়ের ঘরের স্থলে কমপক্ষে একটি করে টিনের ঘর দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আশ্রায়ন প্রকল্প এবং নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য মাত্র ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জে গৃহায়ন প্রকল্প নেয়া হয়।
তিনি এক্ষেত্রে অধিক সুদে বেসরকারি ঋণদান প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে বলেন, তাদের এসব প্রকল্পে দারিদ্র্য হ্রাস হয় না। বরং কোনভাবে মানুষকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে দীর্ঘ মেয়াদে দারিদ্র্য ল্লন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে একমাত্র দল যে দল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি ও অন্যান্য খাতে বিভিন্ন উপ-কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন এবং ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পছন্দ করতেন। আমরা তাঁর পথ অনুসরণ করছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করা। এ জন্য আমরা দারিদ্র্য মুক্তির প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করছি। একই সঙ্গে আমরা অতি দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী নিপীড়িত মানুষের জন্য জাতির পিতার মমত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই নীতি বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে প্রেরণা যুগিয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় ও বাইরের অশুভ শক্তি সব সময় বাংলাদেশের প্রগতি ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা প-ের তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
১৯৭৪ সালে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে তারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্র করেছে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য আমরা তাদের এই অশুভ তৎপরতা মোকাবেলা করেছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এবার সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ প্রশাসনের সকল স্তর ছিল ঐক্যবদ্ধ। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে রাজনৈতিক তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও সাধারণ মানুষ সজাগ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ২০১৪ সালে আমাদের সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন ছিল। ‘কারণ সরকারের পরিবর্তন হলে দেশের উন্নয়ন ২০০১ সালের অবস্থায় ফিরে যেতো।’
১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দরিদ্র ও দুঃস্থদের কল্যাণে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর এসব কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সফল নির্বাচনের কারণে আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা চাহিদা এবং জনগণের প্রত্যাশা জানতে পেরেছি এবং আমাদের সরকার সে অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমরা যদি স্বাধীতাকে অর্থবহ করতে চাই, তাহলে জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর গৃহীত পথ অনুসরণ করায় আমরা এটা করতে পেরেছি। জাতিসংঘসহ বিশ্বের সংস্থাগুলো এসব সামাজিক ইস্যু নিয়ে ভাবছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার অবশ্যই দরিদ্রদের ভাতা দেবে। তবে দরিদ্ররা জীবন-যাপন ও পরিবার পরিচালনায় কেবলমাত্র ভাতার ওপর নির্ভরশীল হবেন না।’ ভাতা তাদের সহায়ক হবে। ভাতা ব্যবহার করে তারা আয় করবে।
কেন দরিদ্র হয়, এ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক অবহেলা এবং বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের প্রতি সামাজিক অবহেলা তাদের দরিদ্র করে তোলে।
তালাক অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর কেউ এমনকি মা-বাবাও তাদের আশ্রয় দেন না। শহরে নারীরা ভিড় করছেন, গৃহকর্মী হচ্ছেন, অথবা পতিতালয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁর সরকার তাদের সহযোগিতার জন্য ভাতা চালু করেছে।
‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য অনেক পরিবার মায়েদের অভিযুক্ত করে। এ ধরনের আচরণের পরিবর্তন হচ্ছে। তবে রাষ্ট্র ও সমাজকে অবশ্যই এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে হবে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
দরিদ্র জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সকল ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের গ্রাম পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা রয়েছে। ‘পল্লী জনপদ’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং এই পরিকল্পনার অধীনে গ্রামীণ জনগণের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে।
তিনি বস্তিবাসীদের নিজেদের জন্মস্থানে পুনর্বাসনে ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচির’ ব্যাপারে বস্তিবাসীদের উৎসাহিত করতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এই কর্মসূচির অধীনে বাসগৃহ নির্মাণ করে দেয়া হবে এবং ভিজিএফ কার্যক্রমের অধীনে তাদের ৬ মাসের খাদ্য সরবরাহ করা হবে। তাদের শিশুরা বিনামূল্যে শিক্ষা সুযোগ পাবে।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)